কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর মেঘনা নদী হয়ে চলা বিভিন্ন নৌযানে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছেন নৌযান মালিকেরা। অব্যাহত চাঁদাবাজির প্রতিবাদে চলতি বছর ৪ বার নৌ ধর্মঘট করলেও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ নৌযান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস আলী বলেন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, খোদ পুলিশ সদস্যরা চাঁদাবাজদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছেন। তাই অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাওয়ার নজির নেই।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) ফোরকান শিকদার বলেন, কিছু সন্ত্রাসী পুলিশের নাম ব্যবহার করে নৌযান থামিয়ে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। নতুন করে আবারও অভিযান চালানো হবে। চাঁদাবাজির সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৌযান মালিক ও শ্রমিকেরা জানান, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পাথর, বালু, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজ মেঘনা নদীর সোনারগাঁ উপজেলার নুনেরটেক, বৈদ্যেরবাজার ও মেঘনা সেতু এলাকা হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত করে। এসব নৌযান ও স্থানীয়ভাবে চলা বিভিন্ন বালুবাহী ট্রলার, যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার ও ছোট ছোট নৌকায় প্রতিদিন চাঁদাবাজি করছে সন্ত্রাসীরা। তারা মেঘনা নদীর নুনেরটেক, বৈদ্যেরবাজার ও মেঘনাঘাট এলাকায় তিন ভাগে এই চাঁদাবাজি করে।
জানা গেছে, মেঘনার বৈদ্যেরবাজার এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নাম ব্যবহার করে জসিম উদ্দিন ও গাজি তাওলাদ হোসেন প্রতিটি নৌযান থেকে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা চাঁদা তোলেন। মেঘনাঘাট এলাকায় তারা মিয়া ও আফজাল হোসেনের সহযোগীরা যুবলীগের নাম ব্যবহার করে চাঁদা নেন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া এক মাস ধরে নুনেরটেক এলাকায় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের ব্যানারে সংগঠনের সোনারগাঁ উপজেলা শাখার সভাপতি দাবিদার আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেনের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন যুবক প্রতিদিন নৌযান থামিয়ে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আদায় করছেন।
নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের ভাষ্য, ধর্মঘট ডাকলে প্রশাসন চাঁদাবাজি বন্ধের আশ্বাস দেয়। তখন ধর্মঘট প্রত্যাহারও করা হয়। কিন্তু দু-এক দিন পরই আবার শুরু হয় চাঁদাবাজি।
মিতালী কার্গো জাহাজের মালিক রওশন আলী বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তিন মাসে অন্তত ৬৫ জন চালক ও শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করেছে সন্ত্রাসীরা।
নৌযানে চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন গাজি তাওলাদ হোসেন, আফজাল হোসেন ও আবুল কাশেম। তাঁদের দাবি, সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই তাঁরা নৌযান থেকে চাঁদা নেন। এতে অন্যায় কিছু নেই। তবে বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নৌঘাটে মালামাল লোড-আনলোড করার জন্য ইজারা দিয়েছি। মাঝনদীতে নৌযান থামিয়ে চাঁদাবাজি সম্পূর্ণ অবৈধ। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করার জন্য থানা-পুলিশকে চিঠি দিয়েছি।’
নৌযান মালিক ও শ্রমিকেরা জানান, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের নেতারা স্থানীয় সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, স্থানীয় বারদি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল হক, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি দিয়ে একটি পোস্টার তৈরি করেছেন। ওই পোস্টার দেখিয়ে তাঁরা চাঁদাবাজি করছেন। এ ব্যাপারে সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, ‘আমি এ ধরনের পোস্টার সম্পর্কে অবগত নই। পোস্টার ছাপিয়ে যারা চাঁদাবাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বারদি ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক বলেন, ‘আমার ছবি দিয়ে পোস্টার করে যারা চাঁদাবাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
কৃপ্র/ কে আহমেদ/ এম ইসলাম