কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চট্টগ্রাম হালদা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতির হাট ইউনিয়নের পূর্ব ধলই গ্রামের হাজিপাড়া এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। বসত-ভিটা, ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ হারানোর আতংকে দিনযাপন করছেন এখন হাজিপাড়ার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ভাঙনে সমিতির হাটের প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ৫০০ পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে চলে গেছেন নানা স্থানে। হাজিপাড়ার মানুষ এবছর ঈদ উদযাপন করেছেন ভাঙন আতংক নিয়ে। খবর ইত্তেফাক অনলাইনের।
সমিতির হাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ জানান, সমিতির হাট ইউনিয়নের উপর দিয়ে হালদা নদীর ১০ কিলোমিটার অংশ প্রবাহিত হচ্ছে। প্রায় ৩৫ বছর আগে এই এলাকাটি রক্ষায় এখানে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছিল। তারপর থেকে এই বেড়িবাঁধের আর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। বেড়িবাঁধ নদীতে ভেঙে গিয়ে এখানকার হতদরিদ্র পরিবারগুলো আরো বেশি নিঃস্ব হয়ে গেছে। এদের এখন পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। এই এলাকায় হালদার ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডব চলছে প্রায় ৮/১০ বছর যাবত।
চেয়ারম্যান জানান, ভাঙন রোধে এখনো পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) কোনো ধরনের তত্পরতা চোখে পড়ছে না। ফটিকছড়িতে পাউবি’র কোনো অফিস নেই। হাটহাজারিতে পাউবি’র অফিস থাকলেও সেখানকার সাইট ইঞ্জিনিয়াররা ভাঙন পরিদর্শনে এই এলাকায় কখনো এসেছিলেন কিনা তা কেউ বলতে পারে না। ভাঙনকবলিত অঞ্চল থেকে ফটিকছড়ি উপজেলা সদর মাত্র ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বলে তিনি জানান।
পূর্ব ধলই গ্রামের হাজিপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মোহাম্মদ বেবি বলেন, গ্রামটি রক্ষায় নির্মিত বেড়িবাঁধের এখন আর চিহ্নমাত্র নেই। ভাঙন ক্রমেই গ্রামের ভেতর বিস্তৃত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ রাস্তাসহ বিলীন হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসী গ্রামের ভেতরে নিজেদের বসত-বাড়ির ভেতর দিয়ে চলাচলের বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছে। জানা গেছে, সমিতির হাট হালদা নদী অংশের উজানে দুর্বৃত্তদের একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন নদী থেকে অবৈধভাবে শত শত টন বালি মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করায় হালদার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, সেই সাথে নদীর তলদেশে বালি ও মাটির মিশ্রণে ঘাটতি পড়ছে। ফলে সমিতির হাটের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে পূর্ব ধলই গ্রামের হাজিপাড়া অংশে নদীতে গভীর খাদের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে নদীপাড়ের ভাঙন আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা মেরিন একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত ইনস্ট্রাক্টর নাসির উদ্দিন আহমদ (৮৫) ইত্তেফাককে বলেন, ভাঙনকবলিত হয়েছে হালদার পূর্বপাড়ের প্রায় ২ মাইল দীর্ঘ এলাকা। সর্বস্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন এখন পূর্বপাড়ের প্রায় ২৫/৩০ হাজার মানুষ। তার মতে রোসাংগিরির দক্ষিণাংশের আংশিক এবং সমিতির হাটের পশ্চিমাংশের মানুষ এখন ভাঙনের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে। পাউবো চট্টগ্রামের ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার তারেক ইত্তেফাককে বলেন, হালদা নদী রক্ষা ও বিভিন্ন অংশের কাজের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দুই এক মাসের মধ্যেই তা অনুমোদিত হবে। হালদার নদী ভাঙনের বিষয়টি বর্তমান পানি সম্পদ মন্ত্রীর গোচরীভূত আছে বলেও তিনি জানান।
নদী খননের বিরুদ্ধে হালদা রক্ষা কমিটি
হালদা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া ইত্তেফাককে বলেন, তার সঙ্গে কিছুদিন আগে পাউবো’র কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। তিনি যতটুকু জানেন, পাউবো হালদা নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। এই ড্রেজিংয়ের যে কোনো উদ্যোগ দেশের অন্যতম ও একমাত্র প্রাকৃতিক মত্স্য-প্রজননস্থল হালদা নদীকে ধ্বংস করবে।
হালদা রক্ষা কমিটি ড্রেজিংয়ের কোনো উদ্যোগ মেনে নেবে না। তার পরিবর্তে বোল্ডার, কংক্রিটের কিউব এবং অন্যান্য স্থায়ী উপায়ে যদি হালদার পাড় রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে সেটিকে হালদা রক্ষা কমিটি স্বাগত জানাবে। তিনি জানান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের নির্দেশে ফটিকছড়ির একজন টিএনও হালদা নদীতে অবৈধ ড্রেজিং ও বালু উত্তোলন ঠেকাতে গিয়ে স্থানীয় দুর্বৃত্ত চক্রের বিরাগভাজন হন। শেষ পর্যন্ত ঐ টিএনও-কে ফটিকছড়ি থেকে বদলি হয়ে চলে যেতে হয়েছে। হালদা রক্ষা কমিটির সভাপতি হালদার ইকো সিস্টেম রক্ষা এবং হালদার প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহকে মূল্যবান প্রাকৃতিক মত্স্য-প্রজনন প্রক্রিয়ার স্বার্থে রক্ষায় বালু উত্তোলনকারীদের প্রতিরোধে সরকার ও প্রশাসনের জোর উদ্যোগ কামনা করেন।
কৃপ্র/ এম ইসলাম