কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্ট : ধানের ভালো দাম না পেলেও পেঁয়াজ, আদা ও ভুট্টা চাষে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ফেরত পাবেন কৃষক। সাম্প্রতিক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উৎপাদনশীলতা জরিপে এমনটাই দেখা গেছে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, এসব ফসলে কৃষকের ১০০ টাকা বিনিয়োগে ৮৮ থেকে ১০১ টাকা মুনাফা হয়। এর আগে কলা, আনারস, হলুদ, ফুলকপি, মরিচ ও মিষ্টিকুমড়ার উপর জরিপ করেছিলো বিবিএস।
ওই জরিপে দেখা যায়- এসব ফসলে- বিনিয়োগের শতকরা ৭৬ / ১০৭ টাকা পর্যন্ত মুনাফা হয়। যদিও, এখনো ধান নিয়ে বিবিএসের এ ধরনের জরিপ হয়নি। ২০১৩ সাল থেকে বিভিন্ন ফসলের ওপর উৎপাদনশীলতা জরিপ করছে বিবিএস। এসব জরিপে একটি ফসল কতটুকু জমিতে চাষ হয়, উৎপাদনে বিভিন্ন উপকরণের পেছনে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, এলাকা ও ফসলের বীজের জাতভিত্তিক উৎপাদন ও উৎপাদন খরচ, ফসলের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ও মূল্যসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসে। ভুট্টা নিয়ে বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, দেশে ২০১৪ সালে মোট ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭০০ একর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
প্রতি একর আবাদে খরচ হয়েছে গড়ে ২৩ হাজার ৮০৫ টাকা। এক একর জমিতে গড়ে ২ হাজার ৮৪৬ কেজি ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। এতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে গড়ে ৮ টাকা ৩৬ পয়সা। বিবিএসের হিসাবে, আলোচ্য বছরে কৃষকেরা প্রতি কেজির মূল্য হিসাবে গড়ে ১৬ টাকা ৫৫ পয়সা পেয়েছেন। ফলে প্রতি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে রিটার্ন বা ফেরত পাওয়া গেছে ১৯৭ টাকা। অর্থাৎ কৃষকের লাভ হয়েছে ৯৭ টাকা। দেশে প্রতিবছর ভুট্টা উৎপাদনও বাড়ছে। বিবিএসের হিসাবে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ১১ লাখ ৩৭ হাজার টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছিল।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে ২৫ লাখ ৭২ হাজার টন। জরিপ অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। প্রতি একরে খরচ হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৯৯ টাকা। একরপ্রতি গড় উৎপাদন ৪ হাজার ৬৬৮ কেজি। এ হিসাবে প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৪৪ পয়সা। কৃষক বিক্রি করতে পেরেছেন কেজিপ্রতি গড়ে ২২ টাকা ৯৩ পয়সা দরে। এতে ১০০ টাকা বিনিয়োগে ফেরত এসেছে ২০১ টাকা। দেশে পেঁয়াজের উৎপাদনও বাড়ছে। বিবিএসের হিসাবে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে ১১ লাখ ৫৯ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয়েছে ১৭ লাখ ৪ হাজার টন।
এছাড়া ২০১৫ সালে দেশে ৩৬ হাজার ৪৪৭ একর জমিতে আদার আবাদ হয়েছে। একরপ্রতি গড়ে ৭৮ হাজার ১৯৫ টাকা খরচ করে ২ হাজার ৫৫১ কেজি আদা উৎপাদন করা গেছে। প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ পড়েছে ৩০ টাকা ৬৫ পয়সা। যা গড়ে ৫৭ টাকা ৬৪ পয়সা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন কৃষকেরা। জরিপ অনুযায়ী, প্রতি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে কৃষক ১৮৮ টাকা ফেরত পেয়েছেন, লাভ হয়েছে ৮৮ টাকা। বিবিএসের হিসাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে ৬৯ হাজার ৫০৮ টন আদা উৎপাদিত হয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎপাদিত হয়েছে ৮৩ হাজার টন আদা। ২০১৪ সালে করা বিবিএসের আরও কয়েকটি উৎপাদনশীলতা জরিপ বলছে, প্রতি ১০০ টাকা বিনিয়োগে ফুলকপিতে ১০৭ টাকা, মরিচে ১১৯ টাকা, মিষ্টিকুমড়ায় ১৩৫ টাকা, হলুদে ৮৬ থেকে ১০৭ টাকা, কলায় ২০৭ টাকা ও আনারসে ৭৬ টাকা লাভ হয় কৃষকদের।
অবশ্য এসব হিসাব করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বছরগুলোর উৎপাদন খরচ ও বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এসব জরিপ একটি বিশেষ বছর অথবা মৌসুমকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে। তবে কৃষিতে অস্থিতিশীলতা বা ওঠানামা খুব বেশি। গড় বিবেচনায় নিলে হিসাবটি ঠিক আছে। কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কৃষক ফসলের গড় দামের চেয়ে কম পায়, অনেকে বেশি পায়। এ দুয়ে মিলে গড় দামটি ঠিক হয়। তিনি বলেন, কৃষিপণ্যের দামের ওঠানামাই কৃষির বড় সমস্যা। আসলে কৃষক কতটুকু লাভবান হচ্ছেন তা বুঝতে হলে কয়েক বছরের চিত্র দেখা প্রয়োজন।
কৃপ্র/জ ই মাসুদ / কে আহমেদ/ এম ইসলাম