কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চলতি ২০১৬-’১৭ অর্থবছরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। বিশেষায়িত এই ব্যাংকটি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় ৩৭৮টি শাখার মাধ্যমে এই বিশাল আকারে ঋণ বিতরণ করবে। এর মাধ্যমে ব্যাপক শস্য উৎপাদন ও গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক গতি সঞ্চার ছাড়াও কৃষি উৎপাদনের কাজে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আউয়াল খান রোববার বাসসের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এই ঋণ বিতরণ ছাড়াও চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা ঋণ আদায় ও ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ডিপোজিট সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ব্যাংক ও গ্রাহকদের স্বার্থে ঋণ বিতরণ, ঋণ আদায় বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায় ও ডিপোজিট সংগ্রহসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সকল আঞ্চলিক ও শাখা ব্যবস্থাপকদের আরও গতিশীল হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় খাদ্য চাহিদার প্রেক্ষিতে কৃষি উৎপাদন ক্রমশঃ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে কৃষি কার্যক্রমে কিভাবে আরো বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা ও গতি সঞ্চার করা যায় সেজন্যও তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ইতোমধ্যে এই ব্যাংক ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ৩৩২ কোটি ২৫ লাখ টাকার গত অর্থবছরের শ্রেণীবদ্ধ বকেয়াসহ ১ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ঋণ আদায় করেছে। ব্যাংকের তহবিল বাড়ানোর ফলে মোট জমা ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। তিনি বলেন, প্রত্যেক অর্থবছরের আগেই একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে এবং তা বিভিন্ন নির্দেশনাসহ মাঠপর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এতে ব্যাংককে লাভজনক ও স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প সেক্টরে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় অংশীদার এই ব্যাংক কার্যকর কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করছে, যা তৃণমূল পর্যায়ে ঋণ কর্মসূচিকে সহজতর করেছে।
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে আউয়াল খান বলেন, ‘আমরা মানুষের মধ্যে সাহস সঞ্চারের জন্য বিশেষ ঋণ কর্মসূচি চালু করেছি। এই ঋণের আওতায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান এবং পরিবেশবান্ধব ও বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে সৌরবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য ঋণ দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, শস্য উৎপাদনের জন্য ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৬২ জন কৃষকের মাঝে ৭৩৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৭৮১ জন কৃষকের মধ্যে ডাল, তেল ও ভুট্টার বীজসহ বিভিন্ন আমদানি বিকল্প শস্যের উৎপাদনে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকারও বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এই খাতে সুদের হার শতকরা ৪ ভাগ কম (ভর্তুকি) দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের জন্য জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে গতিশীল নেতৃত্বে এই ব্যাংকে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রোটিনের অভাবের দূরীকরণে পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ২৫০টিরও বেশি শাখাকে কম্পিউটারাইজ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৩৭৮টি শাখাকেই আধুনিক আইসিটি সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। এতে অনলাইন ব্যাংকিং, এসএমএস ব্যাংকিং ও এটিএম বুথ সার্ভিস চালু করা হবে। যার মাধ্যমে এই ব্যাংক সহজেই যাবতীয় আপডেট সেবা প্রদানে সক্ষম হবে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র / এম ইসলাম