কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাহাড়ের অধিকাংশ আদিবাসী পরিবার ঐতিহ্যগতভাবে জুম চাষের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। অপরিকল্পিত জুম চাষের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে মাটির উর্বরতা তেমনি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে মাটির ক্ষয়। প্রতিবছর ফলন ও মাটির ক্ষয় রোধ করে একই জমিতে বার বার ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে জুমিয়াদের খাদ্য সঙ্কট দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আওতাধীন ২০১৩ সালে প্রথমে তিন পার্বত্য জেলায় সাস্টেইনেবল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কম্পোনেন্ট-২ নামে প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন। ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০ একর জমিতে ৫০০ কৃষককে নিয়ে গবেষণা মূলক কাজ শুরু হয় বান্দরবানের রামরি পাড়া, ম্রংলং পাড়া ও পর্যটন চাকমা পাড়া এলাকায়। পরিমিত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে একই জমিতে অভিনব জুম চাষ পদ্ধতিতে লাভবান হচ্ছে জুমচাষীরা।
পরিক্ষামূলকভাবে এটি বান্দরবান জেলায় হলেও পর্যায়ক্রমে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতেও বাস্তবায়ন করা হবে। ম্রংলং পাড়ার জুম চাষী মেনন ম্রো জানান, আদিকাল থেকে একই জমিতে জুম চাষ করতে হলে তাদের সর্বনিম্ন ২-৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়। সেই সময় অন্য পাহাড়ে গিয়ে নতুন করে আরকেটি জুম প্রস্তুত করতে হয়। এর খরচের পরিমাণটা বেশি হয় ফলনও পাওয়া যায় কম। মে মাসে শুরু হয় জুম পোড়া আর জুমে ধান কাটা শেষ হয় সেপ্টেম্বর মাসে।
জুম পোড়া থেকে শুরু করে জুমের ধান কাটা সময়টুকু তাদের সংসারের খাদ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর জুমচাষীদের ধারণা পাল্টে গেছে। পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করে তারা এখন প্রতিবছর একই জমিতে জুম চাষ করছে, ফলনও ভাল হচ্ছে। অন্যদিকে কমছে জুম স্থানান্তরের বাড়তি খরচ। রামরি পাড়ার আরেক জুমিয়া তুংচাই ম্রো বলেন, জুম চাষে আগে কষ্ট হত বেশি কিন্তু ফলন হতো কম।
এখন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগে জুমে ফলন পাচ্ছি বেশি, কষ্ট কম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. জহির উদ্দিন জানান, জুম চাষ পুরোনো পদ্ধতি, তবে গবেষণার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে পরিমিত সার প্রয়োগ করে প্রতিবছর একই জমিতে বেশি ফসল ফলানো সম্ভব।
এর ফলে মাটির ক্ষয় রোধ হবে এবং উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, পাহাড়ী বেশিরভাগ মানুষ জুম চাষ নির্ভর। আবাদী জমিতে ফলন কম হলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ওইসব অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে জুমের ফলন ভাল হবে এবং চাষীরা লাভবান হবে।
গত বছর বান্দরবানে আট হাজার ৯শ’ ৪৭ হেক্টর পাহাড়ী ভূমিতে জুম চাষাবাদ করা হলেও চলতি বছর ৮ হাজার ৯শ’ ৬৭ হেক্টর ভূমিতে জুম চাষাবাদ করা হয়। জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি থানচি উপজেলায় দুই হাজার সাতশ’ ৫০ হেক্টর ভূমিতে জুম চাষাবাদ করা হয়।
সুত্রঃ জনকণ্ঠ অনলাইন/ কৃপ্র/ এম ইসলাম