কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঢাকাসহ বিশ্বের মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার মেগাসিটিগুলোর আশপাশের ভূগর্ভস্থ পানি আগামী ১০ বছরের মধ্যেই দূষিত হয়ে যাবে। বিপুল সংখ্যক মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে প্রচুর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
এর আগে ভাবা হতো, মাটির গভীর স্তরের পানি আর্সেনিক এবং অন্য রাসায়নিকে দূষিত হবে এই শতকের শেষ দিকে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, অতো সময় লাগবে না। সমস্যাটা আগামী দশকেই শুরু হবে। এর ফলে শুধু পরিবেশগত ক্ষতিই হবে না স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দেবে। সুতরাং মেগাসিটিগুলোর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে এখনই জরুরি ভিত্তিতে না ভাবলে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এমনটাই সতর্ক করা হয়েছে ওই গবেষণা প্রতিবেদনে।
ঢাকা শহরে প্রায় দেড় কোটি মানুষের বাস। বিশ্বের অন্যতম মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার নগরীগুলোর মধ্যে একটি এই শহর। এছাড়া এখানে প্রতি বর্গমাইলে ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষের বাস। অর্থাৎ বিশ্বের চরম জনঘন শহরগুলোর মধ্যেও স্থান করে নিয়েছে ঢাকা। এতো কম জায়গার মধ্যে এতো মানুষের সঙ্কুলান করতে গিয়ে পরিবেশের উপরও মারাত্মক চাপ পড়ছে।
জনসংখ্যার এই চাপ পানি সম্পদের ওপর প্রভাব ফেলছে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের অন্যান্য মেগাসিটির মতো ঢাকা শহরও ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। এই পানি আসে মূলত ‘অ্যাকুইফার’ থেকে। অ্যাকুইফার হলো এমন ধরনের ভেদ্য শিলা যা ভূগর্ভস্থ পানি ধারণ ও স্থানান্তরে সহায়তা করে। বিশুদ্ধ পানি, এই অমূল্য সম্পদটি এই শিলাস্তরেই থাকে।
ভূপৃষ্ঠের পানিতে বিভিন্ন ধরনের দূষণ সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। এর মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত ধাতু (যেমন: সীসা), জৈববস্তু, নাইট্রেট এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট আর্সেনিক। ফলে এ ধরনের ক্ষতিকারক বস্তু শরীরে গ্রহণ থেকে বাঁচতে অ্যাকুইফার থেকে ভূগর্ভস্থ পানি পাম্প করে তোলাটা জরুরি। তবে অতিমাত্রায় পানি তোলার কারণে অ্যাকুইফার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং উপরিভাগের পানির দ্বারা দূষিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে নগরবাসিদের বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
অবশ্য এই হতাশাজনক পর্যবেক্ষণটি প্রথমত একটি সাধারণীকরণ অ্যাকুইফার মডেলের ওপর ভিত্তি করে অনেক আগেই দেয়া হয়েছিল। এই মডেলে ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অ্যাকুইফারের শিলার গঠন পানির প্রবাহ এবং দূষণ বিস্তরণকে প্রভাবিত করে। কিন্তু অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনের সঙ্গে এর সম্পর্কটা কেমন তা অস্পষ্ট।
ন্যাচার কমিউনিকেশন জার্নালে প্রকাশিত সর্বশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে ইউনিভার্সিটি ডেলাওয়ারের বিজ্ঞানীরা অ্যাকুইফার এবং ভূগর্ভস্থ পানির অতিব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে নতুন অ্যাকুইফার মডেল তৈরি করেছেন। অ্যাকুইফারের বৈসাদৃশ্যের (হেটেরোজিনিটি) ভূতাত্ত্বিক এবং পরিসংখ্যানগত সিমুলেশনের ভিত্তিতে তৈরি এ মডেল।
এই গবেষণার জন্য ঢাকার কাছাকাছি বেশ কয়েকটি এলাকার শিলা সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন শিলাস্তর গঠনকারী অ্যাকুইফারগুলো এখানে বিবেচনায় নেয়া হয়। তারা দেখেছেন, অতিমাত্রায় পানি উত্তোলনের কারণে ঢাকার আশেপোশের এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এবং এর ফলে অ্যাকুইফারের গভীর স্তরে উপরের স্তর থেকে দূষিত পানি প্রবেশ করছে। অগভীর স্তরের এই পানিতে আর্সেনিক থাকে যা গভীর স্তরের (১৫০ মিটারের বেশি গভীর) অ্যাকুইফারকে আগামী দশকের মধ্যে দূষিত করার সম্ভাবনা প্রবল।
কৃপ্র/ এম ইসলাম