চাষা আলামীন জুয়েল: বাজারে অনেক জৈব সার পাওয়া গেলেও তা গুনগত মানের দিক থেকে অতি নিম্ন। তাই খুব অল্প সময়ে আমরা যদি জৈব সার তৈরি করে তা মাটিতে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে খুব সহজেই এ দেশের মাটির হারানো গুনাবলী ফিরিয়ে আনতে পারবো। অর্থাৎ মাটিতে যে পরিমান জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন, তা পূরণ করতে সক্ষম হব। আর এ কাজটি ‘কুইক কম্পোস্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে খুব সহজেই প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এ সার তৈরিতে যেসব উপকরণের প্রয়োজন হয় তাহলো-খৈল, চালের কুড়া বা কাঠের গুড়া, পঁচা গোবর অথবা হাঁস মুরগির বিষ্ঠা। এসব উপকরণ যে অনুপাতে মেশাতে হবে তাহলো একভাগ খৈলের সঙ্গে দুইভাগ চালের কুড়া বা কাঠের গুড়া, তার সঙ্গে চার ভাগ পঁচা গোবর বা হাঁস মুরগির বিষ্ঠা। সাত কেজি কুইক কম্পোস্ট তৈরি করতে এক কেজি খৈল, দুই কেজি চালের কুঁড়া বা কাঠের গুড়া এবং চার কেজি পঁচা গোবর অথবা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা মিশাতে হবে।
স্থানঃ উঁচু জায়গা যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি জমে থাকে না। সরাসরি রোদ পড়ে না, এমন স্থান অথবা ছায়াযুক্ত স্থান। ছাউনি বা চালার নিচে অথবা বৃষ্টির পানি পড়ে না এমন স্থান ব্যবহার করা যেতে পারে।
তৈরি পদ্ধতিঃ প্রথমত একভাগ খৈল ভালভাবে গুড়া করে দুই ভাগ চালের বা কাঠের গুড়া এবং চার ভাগ দু’ এক মাসের পঁচা গোবর বা এক মাসের হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ভাল ভাবে আলাদা আলাদা করে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশানোর সময় কিছু পানি ছিটিয়ে দিতে হবে, তবে যেন বেশি দেওয়া না হয়। ওই মিশ্রণ দিয়ে কম্পোস্ট বল তৈরি করলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি মিশ্রণে পানির পরিমান বেশি হয়, তাহলে বলটি উপর থেকে ফেলে দিলে ও ভেঙ্গে যাবে না। যদি তা হয় তাহলে আরো কিছু কুড়া মেশাতে হবে। স্তপটির সব উপাদান একবার না মিশিয়ে তিন-চার বারে মিশাতে হবে। তবে মিশ্রণের পরিমান ৩০০-৪০০ কেজির মধ্যে হলে ভালো হয়। এর পর মিশ্রিত পদার্থগুলো ভালোভাবে স্তপ করে রেখে দিতে হবে। তবে শীতকালে স্তপের ওপরে ও চারদিকে চটের বস্তা দিয়ে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
আর বর্ষাকালে বৃষ্টির জন্য পলিথিন ব্যবহার করতে হবে এবং বৃষ্টি থেমে গেলে পলিথিন তুলে ফেলতে হবে। দ্বিতীয়ত স্তপ করে রাখার ২৪ ঘন্টা পর মিশ্রণের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ৬০-৭০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় পৌঁছায়। ওই পরিমান মাত্রা অনুভূত হলে স্তপ তৈরির ৭২ ঘন্টার মধ্যেই স্তপটি ভেঙ্গে উলটপালট করে পূনরায় স্তূপ করে দিতে হবে। স্তপটি খুব বেশি গরম অনুভূত হলে খৈলের সমপরিমান পঁচা গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা মিশাতে হবে। প্রতি দুই দিন পর পর স্তপটি ভেঙ্গে উলট পালট করে দিতে হবে। এভাবে ১৪-১৫ দিনের মধ্যে কুইক কম্পোস্ট সার জমিতে প্রয়োগের উপযোগী হয়ে যাবে। এ সময় সারে কোন প্রকার গরম ও গন্ধ থাকবে না এবং সার ঝুরঝুরে শুকনো ও কালো বাদামী বর্ণের হবে।
জমিতে প্রয়োগঃ জমির উর্বরতা ও আবাদকৃত ফসলের ওপর ভিত্তি করে সার ব্যবহার করতে হবে। তবে প্রতি শতাংশ জমিতে ৬-১০ কেজি পর্যন্ত কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করাই উত্তম। যে সব ফসল মাদা করে বপন বা রোপণ করা হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে মাদায় এ সার ব্যবহার করতে হবে। ধানসহ অন্যান্য ফসলে জমি তৈরির সময় প্রতি শতাংশে ৬ কেজি হারে এবং কুশি পর্যায়ে সেচের আগে ২ কেজি সার উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। সবজি ফসলের ক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় ৬ কেজি এবং ৪ কেজি সার দু’ বারে রিং পদ্ধতি বা নালা করে সবজি বেঁধে প্রয়োগ করতে হবে। তবে সার প্রয়োগের পরে সেচ দিতে হবে। তবে সঠিক পরিমানে এই সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সারে প্রয়োজন হয় না।
সংরক্ষণঃ এই সার চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে অনেক দিন ধরে সংরক্ষণ করা যায় তার জন্য সার গুলোকে ছায়াযুক্ত স্থানে এমনভাবে শুকাতে হবে, যাতে বস্তা সারের পানিতে পচে না যায়। সার ঝুরঝুরে শুকনা এবং সার হাতে মুঠায় নিয়ে জোরে চাপ দিলে ও হাতে কোন রস দেখা যাবে না।
তথ্য সুত্র: আপা প্রকল্প।সকল চাষি ভাইদের জন্য শুভ কামনায়—– চাষা আলামীন জুয়েল।
কৃপ্র/ এম ইসলাম