ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান: রসুন প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধি গাছ হিসাবে পরিচিত। রসুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কন্দ জাতীয় ফসল। ইহার অনেক ঔষধি গুন আছে যাহা নিম্নে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। রসুন হতে ঔষধিগুন পেতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ কোষ কাঁচা রসুন চিবিয়ে বা ছেঁচে খেতে হবে। চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে খাওয়া যায় আবার ভাত খাওয়ার সময় ভাতের সাথে মিশিয়ে চিবিয়েও খাওয়া যায়। এতে মুখে গন্ধ কম হবে ও ঝাঁঝ কম লাগবে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা রসুনে নিম্নলিখিত উপাদান বিদ্যামান থাকে;
আর্দ্রতা ; ৬২.০০ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেড ; ২০.৮০ গ্রাম
প্রোটিন ; ৬.৩০ গ্রাম
আয়রণ ; ১.২০ মিলিগ্রাম
কপার ; ০.৬৩ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ ; ০.৮৬ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ; ৩১০.০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ; ৩০.০০ মিলিগ্রাম
জিংক ; ১.৯৩ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ; ৭১.০০ মিলিগ্রাম
থায়ামিন ; ০.০৬ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লোবিন ; ০.২৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ; ১৩.০০ মিলিগ্রাম
প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৩-৪ কোষ কাঁচা রসুন খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় তার কিছু নিম্নে বর্ণনা করা হল:
১. হৃদরোগ এবং হৃদরোগ জনিত ষ্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
২. উচ্চ রক্তচাপ/হাইপারটেনশন কমায় (পরীক্ষিত)।
৩. রসুনে ”এ্যাজোইন” নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে যাহা রক্ত পাতলা রাখতে সাহায্য করে ফলে রক্ত চলাচল সহজ হয়।
৪. রক্তনালীর ভিতর রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।
৫. রক্তনালীর ভিতর চর্বি ও ময়লা (চষধয়ঁব) জমে নালীর গাত্র সরু হয়ে যাওয়া মারাত্বকভারে প্রতিরোধ করে।
৬. রক্তনালীর গায়ে রক্ত কোষগুলোর আটকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
৭. রক্তনালীকে স্ফীত হতে সাহায্য করে। এভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনে।
৮. ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি হতে দেয় না, ফলে হার্ট সহজে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে।
৯. রক্তের কোলেষ্টেরল কমায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে ৪ সপ্তাহ রসুন খাওয়ার পর কোলেষ্টেরল ১২% কমে।
১০. ব্লাড সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে।
১১. গলা ব্যথা, গলা বসে যাওয়া, হাপানী, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, কাশি, হুপিং কাশি ও ঠান্ডা লাগা ভাল করে।
১২. রসুনে এন্টিক্সিডেন্ট থাকে যা প্রষ্টেট গ্রন্থি, মলাশয়, মলদ্বার, কন্ঠনালী, ত্বকের টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
১৩. কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে দাঁতের ব্যথা ভাল হয়।
১৪. রসুনে ”এ্যালিসিন” নামক নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে যার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ভাইরাল, এন্টি ফ্যাঙ্গাল কার্যকারিতা আছে এবং যাহা ক্ষত, যক্ষা, আমাশয়, টাইফয়েড, কলেরা ও পাকস্থলির রোগজীবানু ধ্বংস করে।
১৫. ভিটামিন সি থাকে যা স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করে এবং ইহা রক্তনালী নমনীয় করে রক্ত চলাচল সহজ করে।
১৬. লিভারের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১৭. ফুসফুসের রোগ সারায়।
১৮. কুষ্ঠ পরিষ্কারক।
১৯. রিউমেটিক (বাতজনিত) রোগ সমুহের উপর কাজ করে।
২০. রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে।
২১. হজমে সাহায্য করে।
২২. চোখ ভাল রাখে।
২৩. শরীরের এলার্জি সারায়।
২৪. স্মরন শক্তি প্রবল করে।
২৫. শুক্র ও শক্তিবর্দ্ধক হিসাবে কাজ করে।
২৬. যৌন উদ্দীপনা ও যৌন শক্তি বৃদ্ধিকারক হিসাবে কাজ করে।
২৭. রসুন অকাল বার্ধক্য রোধ করে।
সতর্কতা: অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্ত সহজে জমাট বাঁধে না যা সার্জারীর জন্য বিপদজনক, গর্ভাবস্থায় ও দুগ্ধদানকারী মাতা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কাঁচা রসুন খাবেন না।
ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
কৃপ্র/ এম ইসলাম