কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ তামাক খাত থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ আদায়কৃত অর্থ ব্যায়ের খসড়া নীতমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে । চলতি মাসের মধ্যেই খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা । স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্বস্বাস্থ্য) রোকসানা কাদের বাসস’কে বলেন, সর্বশেষ সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি খসড়া নীতি প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খসড়াটির উপর মতামত চেয়ে সংশ্লিষ্ট ৯ টি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তারা মতামত পাঠিয়েছেন।
চলতি মাসের মধ্যেই খসড়া নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এর পরেই নীতিমালাটি অর্থ মন্ত্রাণালয়ে প্রেরণ করা হবে। জানাগেছে ,গত ২০১৪ -১৫ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মার্চ মাস পর্যন্ত তামাক খাত থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ প্রায় ৬শ কোটি টাকা আদায় হলেও এ সংক্রান্ত ব্যাবহার নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় সংগৃহিত অর্থ পড়ে থাকে । এতে করে তামাক কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে তামাক পন্যের প্রচারণা চালাতে পারলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল তামাক বিরোধী কার্যক্রম বাস্তবায়নে অসুবিধায় পড়তে হয় ।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে জানা গেছে, তামাকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ২০১৪-১৫ সালের বাজেটে প্রথমবারের মত সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ২০১৪ সালের অর্থ আইনে দ্বারা আরোপ করে। তামাকজাত দ্রব্য হতে সারচার্জ আদায় সংক্রান্ত বিধিমালা ১ জুলাই ২০১৪ হতে কার্যকর করা হয়। এ আইন অনুসারে আমদানিকৃত এবং দেশে উৎপাদিত সকল তামাকজাত দ্রব্য হতে ১ভাগ হারে (অর্থনৈতিক কোড ২২১২ এর মাধ্যমে) স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ সংগৃহীত হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সারচার্জ সংগ্রহের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থ্।
স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত এক প্রকার শুল্ক যা সাধারণত জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য যেমন- তামাক, অ্যালকোহল ইত্যাদির ওপর আরোপ করা হয়ে থাকে। এ ধরণের শুল্ককে ‘সিন ট্যাক্স’ নামেও অভিহিত করা হয়। মূলত ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার হ্রাস ও ব্যবহারজনিত অসুখের চিকিৎসা খরচ মেটাতেই এ ধরণের সারচার্জ আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ করা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাধারণত সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা, গবেষণা, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
জানা গেছে, ভারতে এই অর্থ দিয়ে ‘বিড়ি ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে। এই ফান্ডের মাধ্যমে নিবন্ধিত বিড়ি শ্রমিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, সন্তানদের স্কুল ড্রেস, বৃত্তি ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে। থাইল্যান্ডে এই অর্থ দিয়ে ‘থাই হেলথ ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হয়েছে, যা তামাকের ব্যবহার হ্রাসে নানাবিধ কর্মকান্ড যেমন- গবেষণা, মিডিয়া ক্যাম্পেইন ইত্যাদি পরিচালনা করা হয়। নেপালে এই সারচার্জের টাকায় গঠিত ‘হেলথ ট্যাক্স ফান্ড’ থেকে বি.পি কৈরালা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতাল, নেপাল ক্যান্সার রিলিফ সোসাইটিসহ অন্যান্য কমিউনিটি হাসপাতালে সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস ( সিটিএফকে ) এর মূখ্য পরামর্শক মো: শরিফুল আলম বাসস কে বলেন, ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি তারিখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার স্পীকার সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামাকজাত দ্রব্য হতে সংগৃহীত সারচার্জের অর্থের মাধ্যমে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী গ্রহণের ঘোষণা করেন।
ঢাকা ডিক্লেরেশন অব দ্যা সাউথ এশিয়ান স্পিকার সামিট ২০১৬- এ তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহারের বিষয়টি সম্পৃক্ত করা হয়। তামাকজাত দ্রব্য হতে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আদায়ে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা হলেও, উক্ত অর্থ ব্যয়ে কোন বিধান প্রণয়ন করা হয়নি। এ অবস্থায়, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরির জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি সারচার্জ থেকে আদায়কৃত অর্থ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করে। তবে তামাক খাত থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ অর্থ আদায় হলেও এ সংক্রান্ত ব্যাবহার নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় সংগৃহীত অর্থ অলস পড়ে থাকে ।
তামাক বিরোধী সংগঠন ‘প্রজ্ঞার’ নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, মন্ত্রণালয়গুলো থেকে এই খসড়ানীতির উপর মতামত পাওয়া গেছে । মতামতগুলো গ্রহণযোগ্য। এখন এগুলো দ্রুত সংযোজন করে খসড়াটি পাসের ব্যবস্থা করলে সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহারের পথ সুগম হবে। তিনি বলেন, তামাকের ভয়াবহতা রুখতে কার্যকর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরি, গবেষণা ও ভুক্তভোগীদের চিকিৎসা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও অর্থ। সেক্ষেত্রে তামাকপণ্যে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আদায় একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম