কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট জেলার কুমারটারী গ্রামের দালাইলামা বিল। এখানে মানুষের ঘুম ভাঙ্গে পাখির কলতানে। সন্ধ্যা নামে নীড়ে ফেরার কলতানে। নয়নাভিরাম এসব পাখির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। দেশি-বিদেশি নানা জাতের এসব পাখির ভিড়ে বিলটি যেন পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। জেলা সদর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মোগলহাট সীমান্তের শেষ প্রান্তে ও দুর্গাপুর সীমান্ত শুরুতেই গ্রামটির কুমারপাড়া। এখানে মৃত্তিকা শিল্পের সাথে জড়িত ২৫ থেকে ৩০টি হিন্দু পরিবার বংশপরম্পরায় মৃত্তিকা শিল্পকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে।
গ্রামটির পেছনে বিশাল একটি বিল। বিলটি দালাইলামার বিল নামে খ্যাত। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে বাৎসরিক লিজে মৎস্যজীবী শ্রমিকদের নামে প্রভাবশালীরা বিলটি নিলাম ডেকে নেয়। বিলটির তিনশ’ গজ দূরে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত পিলার (৯২৭ পিলার) রয়েছে। বিলের চারধারে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। পাশে রয়েছে বিশাল বিশাল বাঁশ বাগান। গাছ, বিল ও বাঁশ বাগানগুলো সবই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
শীতের প্রারম্ভে সেসব গাছে ভিড় করে নানা জাতের পাখি। গ্রামের মানুষ ও প্রকৃতি এখানে মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেছে। কুমারটারী গ্রামটি সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম। তাই বুঝি অতিথি পাখিরা যাত্রা করে এ গ্রামটির ওপর দিয়ে। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতকালে কখনো বা অন্য ঋতুতেও এখানে আসে অতিথি পাখি। এদের বলে পরিযায়ী। কতক পাখিকে দু’একদিন দেখার পর আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব পাখি নাকি আসে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল ও দূরপ্রাচ্য, যেমন সাইবেরিয়া থেকে। কিছু পাখি আসে হেমন্তে আবার কিছু আসে বসন্তে। শীতকালে আসে হাঁস, রাজ হাঁস, কালেম, ডাহুক বা ছোট সারলী। আরো আসে খঞ্জনা, চটক, মাঠ চড়াই, কসাই পাখি ও আরো অনেক শিকারী পাখি। দেশি পাখিদের মধ্যে রয়েছে কানি বক, সাদা বক, মাছরাঙ্গা, ডাউকপাখি, কদকা পাখি, বালিহাঁস, মনুয়া পাখি, কালোযান, সাদাবুক মাছরাঙা, এশীয় কোকিল, কালো ফিঙ্গে, শ্যামা পেঁচা, বাবুই। কুমারটারী গ্রামের মানুষগুলো পাখি শিকার করতে দেয় না। নিজেরাও শিকার করে না। পাখিরা তাই মানুষের ভালোবাসা পেয়ে নিজেদের মতো করে এখানে ঘুরে বেড়ায় ও চড়ে বেড়ায়। সীমান্ত গ্রামটিতে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মানুষ ঘরে ফিরে প্রশান্তি ঘুম দেয়। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটায়। একই রকমে পাখিরা গ্রামটির গাছে, ঝোপঝাড়ে, বাঁশ বাগানে সন্ধ্যায় আশ্রয় নেয়। তারাও সময় কাটায় প্রিয়জনদের সাথে। অপেক্ষা করে গভীর অন্ধকারের পরে ভোরের আলোর।
কুমারটারী গ্রামের গৃহবধূ লক্ষ্মী রানী (৩৪) জানান, ১৮ বছর বয়সে বিয়ের সুবাদে গাইবান্ধা থেকে কুমারটারী গ্রামে বসবাস। বিয়ের পর থেকে তিনি দেখে আসছেন শীত মৌসুমের শুরুতে কোথা থেকে যেনো নানা ধরনের পাখি দালাইলামার বিলে এসে আশ্রয় নেয়। প্রায় একযুগ ধরে প্রতিবছর একই দৃশ্য চোখে পড়ে। আগে অনেক বেশী পাখি আসতো। এখন দিন দিন সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম