কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডবে বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। শুক্রবার রাতে ময়মনা (৫০) নামে আরো এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। ময়মনা উপজেলার তাওয়াকুচা গ্রামের মৃত ফজল হকের স্ত্রী। এ নিয়ে গত ১ মাসে বন্যহাতির আক্রমণে মৃতের সংখ্যা আটজনে দাঁড়ালো। বৃহস্পতিবার রাতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে উপর্যুপরি বন্যহাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত লোকজন গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর পাহাড়ি গ্রামগুলো হয়ে পড়ছে জনশূন্য। গ্রামগুলো হচ্ছে, তাওয়াকুচা, গুরুচরণদুধনই, পানবর, ছোট গজনী, বাকাকুড়যে ২ অক্টোবর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পানবর গ্রামে একটি বন্যহাতির মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে বন্যহাতির দল। বর্তমানে এসব গ্রামগুলোতে প্রতিরাতেই হানা দিচ্ছে বন্যহাতি।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯৯৬ সাল থেকে এ উপজেলার পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বন্যহাতির তাণ্ডব শুরু হয়। বন্যহাতির দল দিনে গভীর অরণ্যে আশ্রয় নিচ্ছে। সন্ধ্যার পরই লোকালয়ে এসে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। জান-মাল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলেছে। কৃষকদের গোলা ও ক্ষেতের ধান খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে। কাচাঘর-বাড়ি, গাছপালা ও বাগানের শাকসবজির খেয়ে পায়ে মাড়িয়ে দুমড়ে-মুচড়ে একাকার করে দিচ্ছে। বন্যহাতির কবল থেকে জানমাল ও ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে গ্রামবাসীরা মশাল জ্বালিয়ে ঢাকঢোল ও পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু যতই চেষ্টা হচ্ছে বন্যহাতির দল ততই তেড়ে আসছে লোকালয়ে। কিছুতেই হাতি তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গত ১৯ বছরে বন্যহাতির আক্রমণে এ উপজেলার পাহাড়ি গ্রামগুলোতে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আহত হয়েছে অনেক। কয়েক শ ঘর-বাড়ি হয়েছে বিধ্বস্ত। হাতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে না পেরে অনেকেই অন্যত্র চলে গেছে।
কাংশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল হক গ্রামবাসীদের পক্ষে স্থায়ীভাবে হাতি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান। অন্যথায় গ্রামবাসীদের অন্যত্র পুনর্বাসন করা হোক। বর্তমানে বন্যহাতির তাণ্ডবে বিপর্যস্ত পাহাড়ি গ্রামবাসীদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সংসদ সদস্য প্রকৌশলী আলহাজ একেএম ফজলুল হক বলেন, বন্যহাতির কবল পাহাড়ি গ্রামবাসীদের রক্ষায় প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার পাওয়ার্ড পাইলট প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যেই তা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এতে বন্যহাতির কবল থেকে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের জান-মাল ও ক্ষেতের ফসল রক্ষা পাবে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক/ কৃপ্র/ এম ইসলাম