কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নওগাঁ, জেলার রাণীনগর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষিবিদ গোলাম রব্বানী। সফলতার পাশাপাশি তিনি প্রমাণ করেছেন এদেশে বিশেষ করে নওগাঁ’র জমিতে বিদেশী এবং নানা গুণসম্পন্ন জাতের ফল চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। ড্রাগন ফলের চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় তিনি কৃষিজ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এক বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন।
জেলার রানীনগর উপজেলার গুয়াতা গ্রামের বাসিন্দা কৃষিবিদ গোলাম রব্বানী নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারে উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি জানেন ড্রাগন ফল অত্যন্ত মুখরোচক এবং ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের ভেষজ গুণসম্পন্ন। এ কারনেই তিনি নওগাঁয় প্রথম ড্রাগন ফল চাষ করে অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।
গুয়াতা গ্রামের মো: ইসমাইল হোসেনের ছেলে গোলাম রব্বানি ২ বছর আগে নিজ উদ্যোগে তার একবিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলেন। প্রথমে পারিবারিকভাবে এ ফল চাষে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাদের এ বিষয়ে বুঝাতে সক্ষম হন এবং ড্রাগন চাষ শুরু করেন। নিজের একান্ত ইচ্ছা শক্তি থেকেই তিনি এ ফলের বাগান তৈরি করতে পেরেছেন। তার বাগানে গিয়ে দেখা যায় ভিনদেশী ড্রাগন ফলের গাছ শোভা পাচ্ছে। এক একটি খুঁটিতে তিনটি চারটি করে ড্রাগন গাছ তুলে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তার বাগানে মোট ১২০টি ড্রাগন গাছ রয়েছে। সবগুলো গাছেই ফল ধরেছে। কোন কোন ফল পেকেও গেছে। ড্রাগন ফলের পাশাপাশি তার বাগানে থাই জাতের পেয়ারার গাছ রয়েছে ১শ ৬০টি। তবে অন্যান্য ফলের চেয়ে ড্রাগন ফলের মূল্য অনেক বেশি।
এ ফল আর্থিকভাবে খুবই লাভজনক। তিনি জানান, একবিঘা জমিতে মোট ২৫০টি খুঁটি স্থাপন করা সম্ভব। প্রতিটিতে কমপক্ষে ৩টি করে হলেও মোট গাছের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫০টি। একবার গাছ লাগালে ২৫ বছর পর্যন্ত গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে। কেবলমাত্র পরিচর্যা করা এবং সামান্য জৈব সার ব্যবহার ছাড়া আর কোন আর্থিক খরচ নেই। বছরে ৬ মাস এসব গাছে ফল দেবে। মে মাসে গাছে ফুল ফুটতে থাকে। অক্টোবর পর্যন্ত ফল দিতে থাকবে। ফুল ফোটা থেকে শুরু করে ৩৫ দিনের মধ্যে পরিপূর্ণ পাকা ফল পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে ৩৫ দিন পর পর এসব গাছে ৬ মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে।
এ
কটি পূর্ণাঙ্গ বাগানে এ ৬ মাসে একটি গাছ থেকে কমপক্ষে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যাবে। এক বিঘা জমির ৭৫০ গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে ৭৫ হাজার কেজি। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের মুল্য কমপক্ষে ৪শ টাকা। সেই হিসেবে একবিঘা জমি থেকে বছরে উৎপাদিত ফলের মুল্য আসবে ৩ কোটি টাকা।
ড্রাগন ফলের গাছ মূলত কাণ্ড থেকে হয়। এ গাছের কাণ্ড কেটে লাগালে তা থেকে গাছ হয়। এটি চাষ করার জন্য অতিরিক্ত কোন রাসায়নিক সার ও ওষুধের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র জৈব সারই এর জন্য যথেষ্ট।
এলাকার কৃষকদের ড্রাগনচাষে উৎসাহিত করতেই তিনি তার জমিতে এ ফলের চাষ করেছেন। তার বাগানে এ বছর প্রথম ফল ধরেছে। প্রথম বছরই তিনি তার বাগানের ফল ৫শ টাকা থেকে ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি মনে করেন তার এ উদ্যোগ এবং লাভ দেখে যাতে অন্য কৃষকরাও এগিয়ে আসেন এটিই তার ড্রাগন চাষের লক্ষ্য। তার এ ড্রাগনের চাষ আরও সম্প্রসারিত করার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, গোলাম রব্বানির এ উদ্যোগ নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখেন। তিনি এলাকার মানুষের মাঝে এ ফলের চাষ সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এ বাগানটি তৈরি করেছেন। আমরা সার্বক্ষণিক তার বাগানের যাবতীয় খোঁজখবর রাখছি এবং পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমরা চাই তার দেখাদেখি উপজেলার আরো অনেকেই এ লাভজনক ফলের বাগান তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করুক। এ লাভজনক বাগান তৈরি করার জন্য আমরা মানুষকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। এ ফলের বাগানে কম পূঁজি ও পরিশ্রম প্রয়োগ করে অধিক লাভ করা সম্ভব।
সুত্রঃ বাসস/ রিপোর্টঃ মো. কায়েস উদ্দিন/ কৃপ্র/এম ইসলাম