কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় অঞ্চলে বন্যহাতির আক্রমণ বেড়েই চলেছে। এ মাসের শুরুতে ঝিনাইগাতীর পানবর গ্রামে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে একটি হাতি মারা গেছে। এরপর থেকে হাতির পাল লোকালয়ে এসে হামলা ও তাণ্ডব চালাচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে হাতির আক্রমণে দুই নারীসহ ৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে হাতির আক্রমণে ৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩০/৩৫ জন।
এ সময় হাতির পাল ধ্বংস করেছে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর, বিপুল পরিমাণ ফসল ও গাছপালা। প্রাণভয়ে অনেকে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ স্থানে। অপরদিকে গত ৬ মাসে ঝিনাইগাতীর হালচাটি, তাওয়াকুচা, গান্ধীগাঁও ও পানবর এলাকায় ৪টি হাতি মারা গেছে।
২০১৫ সালের মে মাসে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় অঞ্চলের হাতি উপদ্রুত ৩১টি গ্রামে মানুষের সঙ্গে হাতির বৈরিতা নিরসনে সমন্বিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল হাতির তাণ্ডব থেকে পরিত্রাণ। খাদ্যের সন্ধানে হাতি যাতে লোকালয়ে হানা না দেয় সেজন্য পাহাড়ি এলাকায় হাতির জন্য খাদ্য ও নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত অঞ্চলের হাতি উপদ্রুত গ্রামগুলো হচ্ছে হাড়িয়াকোনা, কুমারবাড়ি, বাবলাকোনা, খ্রিস্টানপাড়া, ঝুলগাঁও, মেঘাদল, রাঙাজান, খাড়ামুড়া, গুরুচরণ দুধনই, ছোট গজনী, গোমড়া, হলদীগ্রাম, সমচচূড়া, কালাপানি, বটতলা, খলচন্দা, আন্ধারুপাড়া, কাঁটাবাড়ি, নাকুগাঁও, কালাকুমা, পানিহাতা, চারালি ও মায়াঘাসি। এসব গ্রামের ওপর দিয়েই হাতি নিয়মিত চলাচল করে থাকে।
বন বিভাগ জানায়, হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষার জন্য শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া ও ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা বনাঞ্চলে ভারত সীমান্ত ঘেঁষে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের একশ’ হেক্টর জমিতে হাতির খাদ্য হিসেবে বাঁশ, কলাগাছসহ ১৮ প্রজাতির গাছপালা রোপণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও মায়াঘাসি থেকে তাওয়াকুচা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লেবু ও বেতকাঁটা গাছের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এর সঙ্গে স্থাপন করা হচ্ছে সোলার প্যানেল শক। অপরদিকে হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষার জন্য ২৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করা হয়েছে। প্রতি দলে ১০ জন করে সদস্য রয়েছেন। তবে এক বছর আগে হাতির খাদ্য হিসেবে যে সব গাছপালা লাগানো হয়েছিল তার অনেকাংশই লোপাট হয়ে গেছে।
ইতিপূর্বেও বন্য হাতির অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সীমান্তে মৌমাছি প্রকল্প, বেতগাছ ও বরই চারা রোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সব কর্মসূচিই ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।
সুত্রঃ ইত্তেফাক/ কৃপ্র/ এম ইসলাম