কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গোপালগঞ্জ, জেলার কোটালীপাড়া উপজেলায় উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌকা বাইচ চলছে। এ নৌকা বাইচ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিল বাঘিয়ার নৌকা বাইচ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছরের মতো এ বছরও এ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে লাখ মানুষের মিলন মেলা বসেছে কালিগঞ্জে।
রোববার থেকে নান্দনিক এ নৌকা বাইচ বিপুল আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে। চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত দুশ’ বছরের আকর্ষণীয় এ নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দু’ শতাধিক সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাচারী নৌকা অংশ নেয়। আবহমান গ্রাম বাংলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে লাখো প্রাণের আনন্দ উচ্ছ্বলতায় উপজেলার বাবুর খালে কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত ২ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে নৌকা বাইচ ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বাড়তি আকর্ষণ ছিল নৌকায় নৌকায় মেলা। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে এ নৌকা বাইচ শুরু হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ খালের দু’পাড়ে দাড়িয়ে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। দুপুর থেকে নানা বর্ণে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টি নন্দন এসব নৌকা তুমুল বাইচ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকা বাইচের একের পর এক ছোপ।
ঠিকারী ও কাঁশির বাদ্যের তালে জারি সারি গান নেচে গেয়ে-হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ- ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। দু’কূলে দাঁড়িয়ে থাকা লাখ-লাখ মানুষের হৃদয়ে দোলা লাগে। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন অগনিত সমর্থক ও দর্শক। তারা উৎসাহ দেন বাইচের নৌকার মাল্লাদের। নদীর দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালী ও হর্ষধ্বনিতে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। গোটা এলাকায় সঞ্চারিত হয় উৎসবের আমেজ।
কলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইকেল ওঝা বলেন, জলাভূমি বেষ্টিত কোটালীপাড়ার জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল নৌকা। প্রায় দুশ’ বছর আগে লক্ষ্মী পূজার সময় নৌকা নিয়ে এলাকার মানুষ জমিদার শিবরাম চৌধুরীর বাড়িতে যেতেন। পূজা দেখে ফেরার সময় নৌকায় নৌকায় পাল্লা হতো। নৌকার মাধ্যমে চিত্তবিনোদনের চিন্তা থেকে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু হয়। সে থেকেই লক্ষ্মী পূজার পরের দিন থেকে এ অঞ্চলের নৌকা বাইচ হয়ে আসছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা বলেন, ছোট বেলা থেকে এ নৌকা বাইচ দেখে আসছি। এ খানে কখনোই কাউকে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বাইচের আয়োজন করতে হয় না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ এলাকার বাইচ হয়ে আসছে।
কালিগঞ্জের নৌকা বাইচ দেখতে আসা নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু ও অপুর্ব দাস রুদ্র বলেন, জীবনে অনেক স্থানের নৌকা বইচ দেখেছি। কিন্তু এখানকার মতো এত বড়, কালার ফুল ও রাজকীয় ঢং এর নৌকা বাইচ আমি দেখিনি। আমার দেখা নৌকা বাইচগুলোর মধ্যে এটা সেরা ও সবচেয়ে বড়।
উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, সারাদেশে নৌকা বাইচ যখন বিলুপ্তির পথে তখন কালীগঞ্জের লোকজন নৌকা বাইচ টিকিয়ে রেখেছে। নদীমাতৃক এ অঞ্চলের ২ শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাঘিয়ার নৌকা বাইচ টিকিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম