কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরেন্দ্রভূমি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের ‘রূপগ্রাম এগ্রো’ ফার্মে বিদেশি সুস্বাদু ‘প্যাশন’ ফল চাষে সাফল্য এসেছে। এই ফল থেকে ট্যাংয়ের মতো শরবত তৈরি হয় বলে দেশে ট্যাং ফল নামেও এর পরিচিতি আছে। প্যাশন ফলের বীজকে আবৃত করে থাকা হলুদ সুগন্ধিযুক্ত পাল্পকে পানিতে দ্রবীভূত করে খুবই উপাদেয় শরবত প্রস্তুত করা যায়।
এই শরবত অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি এতই বেশি যে ফলের এক-চতুর্থাংশ একজন মানুষের নিত্যদিনের ভিটামিন সির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। গাছ লতানো, পাতা সবুজ, কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা। ফল সুগোল, বড় সফেদা আকারের, খোসা শক্ত। পাকা-ফলের রং হলদেটে।
ফার্মের পরিচালক সোহেল রানা জানান, তিনি ২০১৫ সালে ঢাকা জাতীয় বৃক্ষ মেলা থেকে প্যাশন ফলের একটি কাটিং চারা এনে খামারে রোপন করেন। লতানো এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে তিনি গাছের জন্য একটি মাচা করে দেন। এক বছর পর গত জুলাই মাস থেকে গাছে ফুল ফোটা শুরু করে। প্রথম দিকে গাছে অনেক ফুল ফুটলেও এর কোননটিই ফলে পরিণত না হয়ে ঝরে যেত।
একপর্যায়ে প্যাশন ফল চাষ নিয়ে আমি ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করে জানতে পারি প্যাশন ফুলে কৃত্রিম উপায়ে পারাগায়ন করলে দ্রুত এবং অনেক বেশি ফল পাওয়া যায়। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও দেখে হাতে হাতে পরাগায়নের কলাকৌশল শিখে আমার গাছে তা প্রয়োগ করতে থাকি। এর কিছুদিন পর গাছে ধরতে থাকে বহুল কাঙ্খিত প্যাশন ফল। ইতোমধ্যে একটি গাছে ৫০/৬০ টি ফল ধরেছে। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন খামারে আসছেন প্যাশন ফল দেখতে। আমি এই গাছ থেকে চারা তৈরি করছি। আগ্রহী অনেকেই এখন চারা সংগ্রহের জন্য আসছেন। সামনে বছর আমি আরও বড় পরিসরে এই ফলের চাষ করবো। এখন খামারের ১৫ বিঘা নিজস্ব জমিতে ড্রাগন ফল, বারি মাল্টা-১, আম, লিচু, থাই পেয়ারাসহ ৫০ প্রজাতির ফলের গাছ আছে।
সোহেল রানা আরও জানান, প্যাশন চাষে কোনো সার, সেচ, কীটনাশক এমনকি বিশেষ কোন পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। শুধু শিম বা লাউ-কুমড়া গাছের মতো মাটিতে চারা লাগানোর পর তা বড় হলে বাঁশের মাচায় অথবা কোনো বড় গাছে উঠিয়ে দিলেই হয়।
জেলার সাপাহার উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল আকতার জানান, সোহেল রানাকে বিভিন্ন সময় এই ফল চাষে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ‘প্যাশন’ ফল চাষে সাফল্য পাওয়ায় এই অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অপার সম্ভাবনা। এর ফলে এই ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকার হাজার হাজার একর পতিত জমিতে ‘প্যাশন’ ফল চাষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
এই ফল সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশিষ্ট উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল আলম জানান, প্যাশন ফলের উৎপত্তি হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার রেইন ফরেস্টের আমাজান অঞ্চলে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং তদসংলগ্ন প্যারাগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনাতে। প্যাশন ফল একটি বহুবর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। প্যাশন ফল দুই ধরনের। পার্পল প্যাশন ফল এবং হলুদ প্যাশন ফল । প্যাশন গাছের ফুল অত্যন্ত নয়নাভিরাম এবং এটি প্যারাগুয়ের জাতীয় ফুল। প্যাশন গাছে বছরে দুবার ফল ধরে। প্রথমবার মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং জুন-আগস্ট মাসে ফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার জুলাই-আগস্ট মাসে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর ১২ থেকে ২০ মাসের মধ্যেই সধারণত ফুল ও ফল পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ হয়। তবে পরিণত অবস্থায় হলুদ রং ধারণ করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, জেলায় ‘প্যাশন’ ফলের বেশ কয়েকটি গাছ থাকলেও সোহেলের হাত ধরে একটিতে সাফল্য পাওয়া গেছে। এই সাফল্যে আগামী দিনে এই অঞ্চলে প্যাশন ফল চাষ বৃদ্ধি পাবে। বরেন্দ্র এলাকার উঁচু জমিতে এই ফল চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে সমাদৃত হতে পারে।
সুত্রঃ http://bonikbarta.com / কৃপ্র/ এম ইসলাম