কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্যারিস চুক্তি অনুসারে কার্বন নির্গমন কমালে তাতে কোনো ক্রমেই পৃথিবী রক্ষা করা যাবে না। শিল্পোন্নত ও অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলো নির্গমন কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল। এছাড়া প্রতিশ্রুত অর্থ দেয়ায় যেভাবে গড়িমসি করছে তা প্রতারণার নামান্তর। আগামী ৭ থেকে ১৮ নভেম্বর মরক্কোর মারাকেশে ২২তম জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ুর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়।
শনিবার বেলা ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহ ২০১৬’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবি জানান। উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।
সংবাদ সম্মেলনে হাসান মেহেদী বলেন, মাত্র ৪ শতাংশ কার্বন নির্গমন করেও বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের মত ঝুঁকিপূর্ণ গরীব দেশগুলো ইতিমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ সব দেশগুলোর কোটি কোটি নিরপরাধ মানুষের জীবন ও জীবিকা ঘন ঘন দুর্যোগ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চরম হুমকির শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস, তীব্র লবণাক্ততা, নদী ভাঙন, পাহাড় ধস, খরা ও অতি বৃষ্টির কারণে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির দিক দিয়ে সর্বোচ্চ ৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয় প্যারিস চুক্তি অনুসারে শিল্পোন্নত এবং চীন ও ভারতের মতো অগ্রসর উন্নয়নশীল দেশগুলো কার্বন নির্গমন কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সে অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এভাবে তাপমাত্রা বাড়লে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্বত ও নিম্নভূমির দেশগুলো বিলীন হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিবছর ১০ হাজার কোটি ডলার দেয়ার কথা থাকলেও সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১০০ কোটি ডলার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো জলবায়ু দুর্ভোগ ব্যবহার করে গরীব দেশগুলোকে ঋণ দিচ্ছে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় কার্বন নির্গমন কমানো, জলবায়ু-দুর্গতদের পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ প্রদান, জলবায়ু তহবিলের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু-বাস্তুচ্যুতদের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসনের অধিকার দেয়া, প্রশমনের তুলনায় অভিযোজনের উপর গুরুত্ব দেয়া ও জাতীয় জলবায়ু কর্তৃপক্ষ গঠন করাসহ সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি এসব দাবি তুলে ধরতে ২২ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহ’ পালন করা হবে। জলবায়ু ন্যায্যতা সপ্তাহে ঢাকা, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের মিছিল, সমাবেশ, প্রতীকী ন্যায় বিচার, প্রতীকী জি-৮ সম্মেলন, কফিনসমাবেশ, ভেলায় চড়ে যাত্রা, উদ্বাস্তুদের শোভাযাত্রা ইত্যাদি কর্মসূচি পালিত হবে।
ক্লিন-টিআইবি-সনাকওয়ার্কিং গ্রুপের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তথ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ম. জাভেদ ইকবাল, সনাক-খুলনার সাহিদা আক্তার পুতুল, অ্যাডভোকেট অশোক কুমার সাহা, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, নাগরিক নেতা শেখ আব্দুল হালিম, স্পেস-এর সালাহ্উদ্দীন টিটল, টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার ফিরোজউদ্দীন, আশরাফুল আলম, ইয়েস সদস্য মাহমুদুন নবী সুজন, এসএম মামুনুর রশীদ, সুস্মিত সরকার, ফয়জুন-নাহার পিংকী, উত্তম তরফদার, ক্লিন-খুলনার নাসিম রহমান কিরণ , সূবর্ণা ইসলাম দিশা প্রমুখ।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম