কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মিঠা পানির মাছ ট্যাংরা। এ দেশের পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিলে যে মাছগুলো পাওয়া যায় তাদের মধ্যে ট্যাংরা অন্যতম। লম্বা আকৃতির গোঁফ ওয়ালা আঁশহীন পিচ্ছিল সুস্বাদু এ মাছটি ভোজন রসিকদের কাছে বেশ প্রিয়। তারা বলছেন ট্যাংরা দিয়ে টমেটোর কারি, আলুর ঝোল, শশা ও কচি মুলার ঝোল, চরচ্চড়ি, শর্সে শাকে ট্যাংরা মাছসহ নানা রেসিপি ঘরে-বাইরে বেশ জনপ্রিয়।
মাছটি শুধু সুস্বাদুই নয়, এতে রয়েছে মানব দেহের উপকারী অণুপুষ্টি উপাদান। পুষ্টির বিবরণ দিয়ে মত্স্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রামে মাছটির ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২ মিলিগ্রাম আয়রন, ৬ গ্রাম চর্বি ও ১৯ গ্রাম প্রোটিনসহ নানবিধ পুষ্টি বিদ্যমান। তবে এক সময় দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও দিনকে দিন মাছটি হারিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানিদের যুক্তি, শস্য ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরাসহ কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণ এর প্রধান কারণ।
এ অবস্থায় প্রজাতিটির সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা সৈয়দপুরের স্বাদুপানি উপকেন্দ গবেষণা চালিয়ে মাছটির কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও প্রতিপালন কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছেন। সৈয়দপুর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান জানান, খরা প্রবণ রংপুর অঞ্চলে বছরের অর্ধেক সময়ে পানি থাকে। তাই এ অঞ্চলে মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের উদ্ভাবিত কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ট্যাংরার পোনা উৎপাদন করে মৌসুমী জলাশয়ে চাষের আওতায় অন্য মাছের বিকল্প হিসেবে মজুদ করা যাবে। এতে করে ওই অঞ্চলে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নতি ঘটানো সম্ভব হবে।
ট্যাংরার কৃত্রিম প্রজনন নিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ জানান, এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ট্যাংরা মাছের প্রজননকাল হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুসরণ করলে নার্সারি পুকুরে পোনা মজুদের ৫৫ থেকে ৬০ দিন পর পুকুর সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে ৫ থেকে ৬ সে.মি. আকারের ট্যাংরা মাছের পোনা পাওয়া যাবে। তাই
বিএফআরআই’র সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি আগ্রহী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি মত্স্য হ্যাচারিগুলো উদ্ভাবিত কৌশল প্রয়োগ করে তাহলে ট্যাংরা মাছের পোনা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে করে দেশীয় এ মাছটির উৎপাদন বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে বিপদাপন্ন অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে। বিএফআরআই’র মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, এটি একটি বিলুপ্তি প্রজাতির মাছ। পোনা উৎপাদনের ফলে এটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশের জীব বৈচিত্র রক্ষা পাবে। এটি দেশের উত্তরাঞ্চলের খরা প্রবণ এলাকায় চাষযোগ্য একটি মাছ। এতে করে ওই অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম