কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলে পতিত জমিতে সর্জান পদ্ধতিতে বছর জুড়ে সবজি ও মাছ চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা আর গ্রীষ্মে লবণাক্ততার কারণে এক সময় চরাঞ্চলে অনাবাদী পড়ে থাকা হাজার হাজার একর জমিতে চাষ করে এখন কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষিজীবীরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বছরের ৬ মাস শুষ্কতা ও লবণাক্ততা এবং বাকি ৬ মাস জলাবদ্ধতার কারণে নোয়াখালীর উপকূলীয় চরাঞ্চলে ২ উপজেলার হাতিয়া ও সুবর্ণচরের হাজার হাজার একর জমি এক সময় অনাবাদি পড়ে থাকতো। গত কয়েক বছর থেকে এসব জমিতে স্থানীয় কৃষকরা সর্জান পদ্ধতিতে মাছ ও সবজি চাষ করেছেন ।
সর্জান পদ্ধতিতে একই জমিতে একসাথে সবজি ও মাছ চাষ করে অনেক কৃষক ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছেন। বিশেষ এ পদ্ধতিতে ধান চায়ের চেয়ে সবজি ও মাছচাষে অধিক লাভ পাচ্ছেন বলে তারা জানান ।তাই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
সুবর্নচর উপজেলার কৃষক আবদুর রশিদ, আমান উল্যাহ এবং হাতিয়ার বাবুল মিয়া জানান, সর্জান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে প্রথমে জমি থেকে মাটি কেটে দুই পাশে উঁচু আইল ও নিচে নালা তৈরি করতে হয়। এরপর আইলের উপর জৈব সার দিয়ে করলা, শসা, শিম, বরবটিসহ নানা রকম সবজি চাষ করা যায়।
একই সময় নালাতে তেলাপিয়া, রুই, কার্প, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। এতে করে বর্ষাকালে যখন চারদিক পানিতে তলিয়ে যায় তখনও এখানকার সবজি ক্ষেতগুলো অক্ষত থাকে। আবার শুষ্ক মৌসুমে যখন চারদিকে পানি থাকে না তখন নালা থেকে পানি উঠিয়ে সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। এতে সবজির ফলন ভালো হয়। বর্তমানে হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষক সর্জান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত তাজা সবজি ও মাছ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক প্রনব ভট্টাচার্য জানান, হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলায় লবনাক্ত প্রবল এলাকায় সর্জান পদ্ধতিতে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। দিন দিন কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রতি বছর চাষাবাদে জমির পরিমাণ ও কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। এতে কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম