কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাঁধাকপি বাংলাদেশের রবি মৌসুমের একটি প্রধান সবজি। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বাঁধাকপির চাষ হয়। অত্যধিক বেলে মাটি ছাড়া যে কোন ধরনের মাটিতে বাঁধাকপি জন্মে। বেলে দোঁআশ থেকে পলি দোঁআশ মাটি বাঁধাকপির জন্য উপযোগী।বাঁধাকপি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ‘ রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ উপকারী।
জাতঃ আগাম জাত লাগাতে চাইলে লাগাতে হবে কে কে ক্রস এবং এক্সপ্রেস ক্রস জাত দুটি। মধ্যম সময়ের উপযোগী জাত হল কে ওয়াই ক্রয়, এটলাস ৭০, টোকিও প্রাইড, গ্রীন এক্সপ্রেস, প্রভাতী ইত্যাদি। আর দেরীতে লাগাতে চাইলে লাগাতে হবে এটলাস ৭০, লিও ৮০, সেভয়, রুবি বল, ড্রাম হেড ইত্যাদি। এ দেশের আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করতে চাইলে করতে হবে বারি বাঁধাকপি ২ (অগ্রদূত), ইপসা বাঁধাকপি ১। সম্প্রতিক আমদানীকৃত হাইব্রিড জাতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সামার ওয়ারিয়র এফ ১, লরেন্স এফ ১, গ্রীন ৬২১ এফ ১, সামার ষ্টার এফ ১, গ্রীন কর্নেট এফ ১, অটাম কুইন এফ ১, সুপার ট্রপিক এফ ১, সামার বয় এফ ১, গ্রীন বল ৪০ এফ ১, সুপ্রিম কুইন এফ ১ ইত্যাদি।
বপনের সময়ঃ ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) থেকে শুরু করে কার্তিক পর্যন্ত বারি বাঁধাকপির চারা রোপণ করা যেতে পারে। অগ্রহায়ন মাসে (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) রোপণ করলে মাথা তেমন বাঁধে না ও অকালে ফুল এসে যায়। তবে সম্প্রতি গ্রীষ্ম ও বর্ষকালেও বাঁধাকপি উৎপাদিত হচ্ছে।
বীজের পরিমাণঃ জাত ভেদে প্রতি শতকে ২-৩ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৫০০-৭০০ গ্রাম।
চারা রোপণ: বীজ বোনার ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়। ভালোভাবে জমি তৈরি করার পর ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝখানে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া নালা রাখতে হয়। বেডের উপর ৬০ সেন্টিমিটার দূরত্বে ২টি সারি করে সারিতে ৪৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা লাগাতে হবে।
সার প্রয়োগ ও সেচ দেয়াঃ প্রতি শতকে গোবর ১২৫ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ৮০০ গ্রাম, এমওপি ৬৫০ গ্রাম সার দিতে হবে। সম্পূর্র্ণ গোবর ও টিএসপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার ২ কিস্তিতে চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর একবার এবং ৩০-৪০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার পর পরই সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে। গাছ বড় হবার সাথে সাথে দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি তুলে সারি বরাবর আইলের মত করে দিতে হবে। ফলে দু’সারির মাঝে নালা তৈরি হবে। এতে সেচ দিতে বেশ সুবিধে হবে।
পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ বাংলাদেশে বাঁধাকপির সবচে ক্ষতিকর পোকা হল মাথা খেকো লেদা পোকা। নাবী করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে।
মাথা খেকো লেদা পোকাঃ এ পোকার ডিমগুলো গাদা করে ছাদের টাইলসের মত একটির উপর একটি সাজানো থাকে। কীড়ার মাথা লাল এবং হালকা থেকে হলুদাভ সবুজ বর্ণের। শরীরের পিঠের দিকে লম্বালম্বিভাবে সমান্তরাল তিনটি ডোরা দাগ থাকে। শরীরের উভয় পাশে দুটি লম্বালম্বি দাগ থাকে। এক সাথে অনেকগুলো কীড়া বাধাকপির বর্ধনশীল অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে বাধাকপির মাথা নষ্ট হয় এবং খাওয়ার অনুপযোগী হয়। কীড়া পাতা কুড়ে কুড়ে খেতে খেতে জালের মত করে ফেলে।
দমন ব্যবস্থাপনাঃ সম্ভব হলে হাত দ্বারা কীড়া ও ডিম সংগ্রহ করে ধ্বংস করা। হাত দ্বারা কীড়া তুলে মারা এবং ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ব্যাকটেরিয়ার স্থানিক প্রয়োগের মাধ্যমে সফলভাবে পোকা দমন করা যায়। কপি ক্ষেতের আশে পাশের কপি জাতীয় আগাছা ধ্বংস করা যাতে প্রথম বংশ জন্মলাভ না করতে পারে। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০মিলি লিটার হিসাবে উদ্ভিদজাত কীটনাশক যেমন: নিমবিসিডিন ছিটানো। প্রয়োজন হলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক নিয়মে স্প্রে করা।
ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ চারা রোপণের ৬০-৯০ দিন পর বাঁধাকপি সংগ্রহ করা যায়। জাত অনুযায়ী প্রতিটি বাঁধাকপি গড়ে ২.৫-৪ কেজি হয়।