কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজশাহী মহানগরীর শেখের চক বিহারীবাগান এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ঘেঁষা একটি সড়কে ভয়াবহ ধস নেমেছে। প্রায় ৪০০ মিটার সড়ক মূল সড়ক থেকে পাঁচ ফুটের মতো নিচু হয়ে দেবে গেছে। এ ছাড়া দেবে গেছে সড়কের পাশের ফুটপাথটি। এক সপ্তাহ আগে ফাটল দেখা দেওয়ার পর ধীরে ধীরে সড়ক ও ফুটপাথটি দেবে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কারণে ধস নেমেছে সড়ক-ফুটপাথে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার কারণে সড়কে ধস নামেনি। তাদের দাবি, সড়কের নিচে থাকা আবর্জনা পচে গিয়ে ধস নামতে পারে। গতকাল সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৪০০ মিটার সড়কে ধস নেমে মূল সড়ক থেকে প্রায় পাঁচ ফুট নিচু হয়ে দেবে গেছে। সড়কের পাশের টাইলস বসানো ফুটপাথ এবং মাটিতেও দেখা দিয়েছে ফাটল। ধসের কারণে কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে।
দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সড়কের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। শেখের চকের বাসিন্দা আবদুস সালাম (৫০) বলেন, ধসের কারণে ২০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি বাড়ি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার প্রায় ২০০ মানুষ। কুদরত আলী (৪০) নামে আরেক বাসিন্দা জানান, সপ্তাহখানেক আগে সড়কটিতে ফাটল দেখা দেয়। এরপর প্রতিদিন ফাটল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধসও নামে। শনিবার ধস নামার মাত্রা বেড়ে যায়। সিটি করপোরেশনের পানি নিষ্কাশনের ড্রেন না থাকলে বাড়িগুলো এরই মধ্যে ভেঙে পড়ত। আলমগীর হোসেন (৩৫) বলেন, গত বছর বর্ষার সময় পদ্মার তীর রক্ষার ব্লক ধসে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন একটা ব্লকও নেই। এ বছর বর্ষার সময় মূল সড়কে ফাটল থাকা সত্ত্বেও পাশ দিয়ে ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের পাশাপাশি এখন এই ফুটপাথটিও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আলমগীরের স্ত্রী সাজেদা বেগম (৩০) বলেন, শুধু ড্রেনের কারণে এখনো বাড়িগুলো টিকে আছে। কখন ভেঙে পড়বে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। রাতে ঘুমেও তিনি দুঃস্বপ্ন দেখছেন। তাদের বাড়িসহ এলাকার ইদ্রিস, কালাম ও খোকনের বাড়ি যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
বিহারীবাগানের একটু ভিতর বাড়ি মনিরা বেগমের। তিনি বলেন, সড়কের ধার ছাড়া ভিতরের বাড়ির মধ্যেও দেখা দিয়েছে ফাটল। প্রতিটি মিনিটে যেভাবে সড়কে ফাটল দেখা দিচ্ছে, এতে যে কোনো সময় বাড়িগুলোও ভেঙে পড়বে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ইদ্রিস আলীর বাড়ি। ইদ্রিস বলেন, ‘ভয়ে আমরা ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে পারছি না। লাইন বন্ধ করে দিয়েছি। ব্যবহূত পানি সড়কে মিশে যদি আরও ধস বাড়িয়ে দেয়— এ আশঙ্কায় পানি ব্যবহার করছি না। আতঙ্কে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না।’ ইদ্রিসের ছেলে কাওসার আলী (২২) বলেন, গত বছর এ এলাকা থেকে পাড়ের ব্লক সরে গেছে। এরপর আর ব্লক বসানো হয়নি। এ বছর ফুটপাথ নির্মাণ করার সময় মূল সড়কে ফাটল ছিল। কিন্তু তা মেরামত না করেই পাশে ফুটপাথ নির্মাণ করা হয়েছে।
ধস নামার পরও সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। ধসের কারণে হেলে পড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ফাইজুল আলম বলেন, যে কোনো মুহূর্তে খুঁটিগুলো ভেঙে পড়তে পারে বাড়ির ওপর। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশনকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, সড়ক ধসের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনের কোনো ত্রুটি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বন্যার পানি বা ব্লক সরে যাওয়ার জন্য যে ত্রুটি দেখা দিতে পারে তাও পাওয়া যায়নি। ওই এলাকার ব্লকগুলো ঠিকঠাক রয়েছে। তাতে কোনো ধরনের ফাটল ধরেনি। তবে তারা ধারণা করছেন, সড়কটির নিচ থেকে বর্জ্য পচে ধস নেমেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, তিন বছর আগে ওই এলাকায় সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। তখন মাটিতে কোনো সমস্যা ছিল না। রোলার দিয়ে ভালোভাবে মাটি মজবুত করে তারপর সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নিচে আবর্জনা থাকলেও সড়ক দেবে যাওয়ার কথা নয়।
সুত্রঃ bd-pratidin.com/ কৃপ্র/ এম ইসলাম