কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চলনবিল অঞ্চলে বিনাচাষে রসুন চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় কাদাজলে চলছে আমন ধান কাটা। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিগুলোতে চলছে রসুনের বীজ রোপনের কাজ। রসুন চাষকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলের পুরুষদের পাশাপাশি কৃষক বধূদেরও ব্যস্ত সময় কাটছে। গত প্রায় এক দশক ধরে এই প্রথায় রসুন চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ফলন ভালো হওয়ায় চলনবিল অঞ্চলে বিনা হালে রসুন চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মওসুমে নাটোরের সাতটি উপজেলায় ১৯ হাজার ৯শ ৬০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আরো ১০ হেক্টর জমিতে বেশি রসুন চাষ হবে। সার্বিকভাবে চলনবিল অঞ্চলের গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, তাড়াশ, চাটমোহরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বিনা হালে রসুন চাষের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি অধিদপ্তর।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে মাঠে চলছে আমন ধান কাটার কাজ। আমন কাটার পর পরই ওই জমিতে রোপন করা হচ্ছে রসুনের বিজ। তাছাড়া রসুন চাষকে কেন্দ্র করে গাঁয়ের নারীরা রসুন ভাঙ্গার কাজ করছেন। এতে তাদের প্রতি মণ রসুন ভাঙ্গার মজুরি দেওয়া হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। একমণ রসুন ভাঙ্গতে সময় লাগে দুই দিন। চলনবিল অঞ্চলের কয়েক হাজার নারী রসুন ভাঙ্গার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, চলতি মওসুমে প্রতি বিঘা রসুন চাষে বীজ বাবদ ২০ হাজার, সার-কীট নাশক বাবদ ৫ হাজার, জমি প্রস্তুত-রোপন বাবদ শ্রমিক খরচ ৭ হাজারসহ কৃষকের সার্বিক ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া (বর্গা) লিজকৃত জমিতে রসুন চাষ করতে ব্যয় হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। তাছারা বিগত কয়েক বছর ধরে অধিক খরচে রসুন আবাদ করলেও দর পতনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক।
চাষ পদ্ধতি: আমন কাটার পর ধানের খর তুলে জমি প্রস্তুত করতে হয়। এরপর প্রয়োজনীয় সার-কীট নাশক দিয়ে কাদার ওপরে রসুন রোপন চলে। রোপনকৃত রসুন ধানের খর বা কচুরীপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ঢেকে দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যই রসুনের চারা গজায়। তবে রসুনে লোকসান এড়াতে সাথী ফসল হিসাবে বাঙ্গি চাষের জন্য রসুনের জমিতেই দুই হাত অন্তর অন্তর আলাদা জায়গা রাখা হচ্ছে। এক জমিতে একই সময়ে সিমীত খরচে দুই ফসল পাওয়ায় কৃষকদের কাছে রসুন চাষ বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
চলনালী গ্রামের কৃষক আমানত জানালেন, এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করছেন তিনি। রসুনের সাথী ফসল হিসেবে ৫ বিঘা জমিতেই বাঙ্গি আবাদ করেছেন। কৃষক আবুল আলী জানান, তিনি চলতি বছরে ৪ বিঘা বর্গা (লীজ) নিয়ে রসুন আবাদ করছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে রসুনে ভাল ফলন হলেও আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। মাঝে মাঝে দাম বাড়লেও বেশিরভাগ সময় রসুনের দরপতন ঘটে। কৃষিতে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় কিছুটা বেশি খরচ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে চলনবিলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক হারে রসুন চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফলন ভালো ও অশানুরূপ দাম পাওয়ায় রসুনকে সাদা সোনা আখ্যায়িত করেছেন চাষিরা।
সুত্রঃ ইত্তেফাক / কৃপ্র/ এম ইসলাম