মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসাইন সিদ্দিকীঃ মাঠে মাঠে আমন ধান। সবুজ এ ধানের অন্যতম শত্রু বাদামী ঘাসফড়িংয়ের । এরা পাতার খোল, পাতা ও পাতার মধ্যশিরার ভেতরে ডিম পাড়ে। চার থেকে নয় দিনের মধ্যে ডিম থেকে নিম্ফ বের হয়। প্রথম পর্যায়ে নিম্ফগুলোর রঙ সাদা থাকে এবং পরে বাদামী রঙের হয়। নিম্ফ থেকে পূর্ণবয়ষ্ক ফড়িং এ পরিণত হতে ১৪ থেকে ২৬ দিন সময় লাগে। বীজতলা থেকে শুরু করে ধান পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত যেকোনো সময়ে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে ধানগাছে কাইচথোড় আসলে এর আক্রমণ বেড়ে যায়। এক জোড়া বাদামী ঘাসফড়িংয়ের ৩ থেকে ৪ প্রজন্মে ৩৫ লক্ষ পোকার জন্ম দিতে পারে এবং ৫০০০ মাইল পথ অতিক্রম করতে পারে। এরা শরীরের ওজনের তুলনায় ১০ থেকে ১২ গুণ বেশি খাবার খায়। দ্রুত বংশ বৃদ্ধির কারণে মাঠের পর মাঠ ফসলের ২০ থেকে ১০০% পর্যন্ত ক্ষতি করতে পারে।
আক্রমণের লক্ষণ: বাদামী ঘাসফড়িংয়ের -এর বাচ্চা ও পূর্ণবয়ষ্ক উভয় পোকা দলবদ্ধভাবে ধান গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস খায়। আর এ কারণে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যায়। বাদামী ঘাসফড়িংয়ের -এর তীব্র আক্রমণে গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে যায়, ফলে দূর থেকে পুড়ে যাওয়ার মত বা বাজ পড়ার মত দেখায়। এ ধরনের ক্ষতিকে ‘হপার বার্ণ’ বলে।
অনুকূল পরিবেশ:১. অধিক সংখ্যক কুশি উত্পাদনশীল উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করলে; ২. জমি অসমতল হলে নিচু স্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। প্রখর সূর্যের তাপে উক্ত পানি বাষ্পিভূত হয়ে উষ্ণ ও আর্দ্র অবস্থা তৈরি হয় যা বাদামী গাছ ফড়িং -এর বংশবৃদ্ধি ও আক্রমণের জন্য অনুকূল পরিবেশ; ৩. চারা ঘন করে রোপণ করলে, জমি স্যাঁতস্যাঁতে হলে এবং জমিতে দাঁড়ানো পানি থাকলে; ৪. জমিতে বিকল্প পোষক আগাছা থাকলে; ৫. অসম হারে নাইট্রোজেন সার (ইউরিয়া সার) ব্যবহার করলে; ৬. বাতাস চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে।
দমনে করণীয়: ১. এলাকার সকল চাষিকে দলবদ্ধভাবে পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে; ২. এ কাজে আইপিএম/আইসিএম ক্লাবসহ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ৩. প্রতি ব্লকে দলীয় আলোচনার মাধ্যমে সচেতনা সৃষ্টি এবং বাদামী গাছ ফড়িং দমনের কলাকৌশল কৃষকদের মাঝে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে; ৪. বীজতলায় এ পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে, সে জন্য নিয়মিত বীজতলা পরিদর্শন, আলোর ফাঁদ পেতে পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করতে হবে; ৫. জমির আইল পরিস্কার রাখতে হবে; ৬. পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। আক্রান্ত জমির পানি সরিয়ে দিয়ে ৭ থেকে ৮ দিন জমি শুকনো রাখতে হবে; ৭. আক্রান্ত জমিতে ২ থেকে ৩ হাত দূরে দূরে ‘বিলিকেটে’ জমিতে সূর্যের আলো ও বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে; ৮. শুধুমাত্র ইউরিয়া ব্যবহার না করে সুষম মাত্রায় ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ব্যবহার করতে হবে। ইউরিয়া কম ব্যবহার করতে হবে (ধাপে ধাপে ব্যবহার করতে হবে); ৯. বালাই সহনশীল জাতের (ব্রিধান ৩১, ব্রিধান ৩৫, বিনা ধান ৬) চাষ করতে হবে; ১০. জমিতে হাঁস ছেড়ে পোকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; ১১. স্বল্প জীবনকালীন ফসলের চাষ করতে হবে এবং আক্রান্ত জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ আপাতত বন্ধ রাখতে হবে; ১২. চারা ঘন করে না লাগিয়ে সারি থেকে সারি ২৫ থেকে ৩০ এবং চারা থেকে চারা ২৩ থেকে ২৫ সে.মি. দূরত্বে রোপণ করতে হবে; ১৩. সন্ধ্যাবেলা আক্রান্ত জমি থেকে একটু দূরে আলোর ফাঁদ জ্বালিয়ে পোকা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে; ১৪. প্রতি গোছায় ২ থেকে ৪টি গর্ভবতী বাদামী গাছ ফড়িং বা ৮ থেকে ১০টি নিম্ফ দেখা গেলে অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় ধান গাছের গোড়ার দিকে ভালভাবে সেপ্র করতে হবে; কিন্তু গাছে যদি একটি করে মাকড়সা থাকে তবে কীটনাশক ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
সুত্রঃ infokosh.gov.bd / কৃপ্র/ এম ইসলাম