কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদী দূষণের শিকার হচ্ছে চরমভাবে। প্রতি বছর কার্প জাতীয় রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাইশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ ডিম ছাড়ে এ হালদা নদীতে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ নদীটি এখন চরমভাবে দূষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হবে হুমকির সম্মুখীন।
সরেজমিন দেখা যায়, নাজিরহাট বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে হালদাপাড়ে গরু জবাই করার পর গরুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এবং জবাইয়ের পর রক্ত নদীতে গড়িয়ে পড়ছে। সে সঙ্গে বাজারে ক্রেতাদের মাছ পরিষ্কারের পর অবশিষ্টাংশ নদীতে ফেলা হচ্ছে। মুরগির খামারের বর্জ্য বস্তা ভরে ফেলা হচ্ছে। তাছাড়া মৃত পশুসহ আবর্জনা ফেলায় প্রতিনিয়ত হালদা দূষণ হচ্ছে। নাজিরহাট পৌরসভাধীন বাজারের সমস্ত ময়লা আবর্জনা ফেলা হয় হালদায়। এসব বর্জ্য ও আবর্জনা জোয়ারের সময় হালদার পানির সঙ্গে মিশে হালদার স্বচ্ছ পানিকে করছে বিষাক্ত। তাছাড়া দখলবাজদের কবলে পড়ে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে হালদার প্রস্থতা। হালদার পুরাতন ব্রিজের দুই দিকের বেড়িবাঁধ দখল হয়ে পড়েছে। নদীতে ফেলানো ময়লা আবর্জনার বিশাল বিশাল স্তূপ পানিতে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এতে হালদার অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম।
৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদীকে রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি হালদার পরিবেশ দূষণে তৎপর হলেও পরিবেশ অধিদফতর ধীরে চল নীতিতে রয়েছে। এ অবস্থায় দেরিতে হলেও হালদা নদী রক্ষা ও দূষণ রোধে কর্মকা- শুরু করেছে পরিবেশ অধিদফতর। এ প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা, সহকারী পরিচালক সিনিয়র কেমিস্ট কামরুল হাসানের সমন্বয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি হালদা ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে হালদা নদীকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণাসহ ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ রোধ, ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ, পরিবেশ দূষণ অন্যতম।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, হালদায় যেহেতু জোয়ার-ভাটা আছে সেজন্য নদীর উপরিভাগে কোন বর্জ্য বা ময়লা পড়লে তা পুরো নদীর পানিকেই বিষাক্ত করে তোলে। হালদা নদী দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি নাজিরহাট পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি আরও জানান, সাধারণত মানুষ সচেতন হলে দূষণ থেকে প্রাকৃতিক এ প্রজনন ক্ষেত্রটি রক্ষা পাবে। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নাজিরহাট পৌরসভার প্রশাসক নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তার নজরে এসেছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
সুত্রঃ dailyjanakantha.com / কৃপ্র/ এম ইসলাম