কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় আমন ধানে ব্যাপকভাবে বাদামী ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আক্রমণের দু-তিন দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের সব ধান। কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে কৃষি বিভাগের লোকদের বিরুদ্ধে। ঘটনা আড়ালে স্থানীয় কৃষি বিভাগ নিজ খরচে কৃষকের পোকায় খাওয়া ধান কেটে ক্ষেত পরিষ্কার করার ঘটনাও ঘটেছে। খবর নয়া দিগন্ত অন লাইনের।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই ব্যাপকভাবে মাজরা ও ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলন ভাল হলেও ফসল কাটার আগ মুহূর্তে বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে বাদামী ঘাসফড়িং। দুই তিনদিনের মাঝেই ক্ষেতের সব ধান নষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো এলাকার কৃষক ক্ষেত থেকে মোটেও ফসল উঠাতে পারছে না।
উপজেলার মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের (২০ নম্বর ব্লক) মামারিশপুর দক্ষিণপাড়ার কৃষক আব্দুস শহীদ (৫৫) জানান, তিনি ২২ কাঠা জমিতে আমন ধান (ব্রি-৪৯) করেছেন। আর কয়েকদিন পর ধান কাটার সময় হবে। কিন্তু হঠাৎ বাদামী ঘাসফড়িং আক্রমণ করায় রাতারাতি সব ধান খেয়ে ফেলেছে। পোকায় খাওয়া ধান ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। পরে খোঁজ পেয়ে কৃষি বিভাগের লোকজন আমাকে চাপ দিয়ে তাদের নিজ খরচে দু’টি কামলা দেন এবং আমি ৪০০ টাকা রোজের চারটি কামলা নিয়ে পোকায় খাওয়া সব ধান কেটে ফেলি।
অপর চাষী বাচ্চু মিয়া জানান, তিনি ১৮ কাঠা ক্ষেত করেছেন। তার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু যেভাবে পোকায় খেয়েছে, মনে হয় ৫ হাজার টাকার ধানও উঠাতে পারবোনা। তাছাড়া ওই পোকায় খাওয়া ধান ক্ষেতের খর গরুও খায় না। আরেক কুষক আবু সাঈদ জানান, কাঠাপ্রতি বার্ষিক ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে তিনি প্রায় দুই একর আমন করেছেন। কিন্তু হঠাৎ পোকায় সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কোন ওষুধেই কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে যা আছে, তাই আমি মেয়ে জামাই আইজুল, মেয়ে জমিলা ও নাতনী শম্পাকে নিয়ে পোকায় খাওয়া ধানগুলো কেটে নিচ্ছি।
ওই এলাকার কৃষানী আজিম উদ্দিনের স্ত্রী বেগম (৫০) কেঁদে কেঁদে এই প্রতিনিধিকে জানান, কয়দিন আগে আমার দুটি গুরু মারা গেছে। ১০ কাঠা আমন করেছিলাম, তাও পোকায় খেয়ে ফেলছে। ক্ষেতে কাচি লাগানোর জো নেই। অসুস্থ্য স্বামী ও ছেলেসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে এখন আমি কিভাবে চলবো।
তাছাড়া একই এলাকায় চাঁন মোহাম্মদের ১৮ কাঠা, আজিজুলের ১৭ কাঠা, হেলিম উদ্দিনের ২৫ কাঠা, আবুল কারামের ২৪ কাঠাসহ ওই ব্লকের কয়েকশ’ একর আমন ধানসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাদামী ঘাসফড়িং ও মাজরা পোকায় ব্যাপকভাকে আমন ধান নষ্ট করে ফেলেছে বলে এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেছন। স্থানীয় কৃষক সেলিম মিয়ার ছেলে মাহফুজ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, কৃষি কর্মকর্তা এসে বাজারে বসে থেকে চলে যান। কখনো মাঠের খবর নেন না।
ওই ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: হাবিবুল্লাহ বিশাল এলাকা জুড়ে পোকায় আমন ধান খাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বাদামী ঘাসফড়িং কোনো ওষুধেই কাজ হয়নি। হঠাৎ করেই এই পোকা আক্রমণ করছে এবং দুই-তিনদিনের মধ্যেই পুরো ক্ষেতের ধান খেয়ে ফেলছে। তবে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করছি ক্ষেতের ধান রক্ষার জন্য।
কৃপ্র/ এম ইসলাম