কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং তার আশেপাশে বায়ু দূষণ এবং ঘন ধোঁয়াশা গত এক সপ্তাহ ধরে এক চরম বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। সারা শহর জুড়ে বাতাসে দেখা যাচ্ছে ধোঁয়াশার আস্তরণ। হাজার হাজার স্কুল কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে তিন দিনের জন্য। ক্রিকেট ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। এমনকি বায়ু দূষণের ওপর নজরদারির আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও এক মামলা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি আসলে কতটা খারাপ, তা সরেজমিনে দেখতে দিল্লির রাজপথে নেমেছিলেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক শুভজ্যোতি ঘোষ। তিনি লিখেছেন বিকেল সাড়ে তিনটে বেজেছে, সূর্যাস্ত হতে দুঘন্টারও বেশি বাকি – কিন্তু আকাশে ছেয়ে আছে একটা ধূসর কালচে ধোঁয়াশার আস্তরণ। আলোর তেজ একেবারেই ফিকে, মাত্র পঞ্চাশ মিটার দূরের ট্র্যাফিক সিগনালও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে রাস্তায় গাড়ির ভিড় অবশ্য থেমে নেই, গাড়ির কালো ধোঁয়া পাকিয়ে উঠছে বাতাসে – পথচারীদের অনেকে কিংবা মোটরবাইক ও সাইকেল আরোহীরা মুখোশ চাপা দিয়ে এই বিষবাষ্প থেকে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করে চলেছেন।
ভারতের রাজধানীতে এই দু:সহ দূষণ চলছে গত একটানা প্রায় সাতদিন ধরে, দীপাবলীতে আতশবাজির রোশনাই মিলোনোর পর থেকেই। দিল্লি শহরজুড়ে বাতাসে দেখা যাচ্ছে ধোঁয়াশার আস্তরণ। দিল্লিবাসীরা বলছেন, “পরিস্থিতি অবর্ণনীয় – মানুষ শ্বাস নিতে পারছে না, চোখ জ্বলছে। এর চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে?”
“অথচ দূষণ নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে, সবাই জানেন পাঞ্জাব-হরিয়ানাতে ফসল তোলার পর তার গোড়াটা জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্যই দিল্লিতে এই অবস্থা। কিন্তু ভোট হারানোর ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। মানুষ মরলে সরকারের কী আসে যায়?” বহু বছর দিল্লিতে কাটানো এই শহরের বাসিন্দাদের বলতে কোনও দ্বিধা নেই এতটা খারাপ অবস্থা আগে কখনও হয়নি। সকালে অফিসে বেরোতে গিয়ে রাজেন্দ্র শর্মা যেমন আবিষ্কার করেছেন, তার চোখ দিয়ে অজান্তেই জল পড়ে যাচ্ছে।
আসলে দিল্লির বাতাসটা যে বিষাক্ত, সেটা এখন দেখা যাচ্ছে একেবারে খালি চোখেই। কিন্তু এটা ঠিক কতটা বিষাক্ত, জানতে বিবিসি বাংলার সাংবাদিক শুভজ্যোতি ঘোষ দ্বারস্থ হয়েছিলেন পরিবেশ দূষণ নিয়ে ভারতের সবচেয়ে সক্রিয় সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের গবেষক পলাশ মুখার্জির কাছে। তিনি বলছেন, “দিল্লিতে দূষণের যেগুলো স্বাভাবিক উৎস, সেগুলো তো আছেই। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে একটা বিশেষ ওয়েদার প্যাটার্ন – অ্যান্টি সাইক্লোন। এতে বাতাসের গতিবেগ প্রায় শূন্যে নেমে গেছে, আর যেটুকু বাতাস আছে তাতে বাইরের পলিউট্যান্টগুলো দিল্লিতে ঢুকছে, কিন্তু দিল্লি থেকে বেরোতে পারছে না।”
পলাশ মুখার্জি আরও বলেন, “দিল্লিতে পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ সূচকে দূষণের মাত্রা স্বাভাবিক সময়েই, গ্রীষ্মে বা বর্ষায় দুশো বা তিনশোর মতো থাকে – যেখানে ভারতীয় মানদন্ডে নিরাপদ লিমিট হল ষাট। অর্থাৎ বছরের বেশির ভাগ সময়েই এটা চার-পাঁচগুণ বেশি বিপজ্জনক থাকে। আর গত কয়েকদিনে এটা সাড়ে-আটশো নয়শোর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে, মানে নিরাপদ লিমিটের চেয়ে পনেরো গুণ বেশি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।” আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠি ধরলে দিল্লির বাতাস এখন নিরাপদ সীমার চেয়ে চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ গুণ খারাপ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম