কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাবনা জেলার সাঁথিয়ার শুঁটকি মাছ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২০টি দেশে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। শুঁটকি মাছ রপ্তানি করে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক অর্থ।
বিল ও নদীর পানি কমতে শুরু করায় উপজেলার ঘুঘুদহর বিল, সোনাই বিল, বড় বিল, ছোট বিল, চলন বিল ও মুক্তরের বিল এলাকায় চলছে মাছ শুঁটকি করার ধুম। বিল এলাকার গ্রামের মধ্যে ঢুকলেই চোখে পড়ে শুঁটকির চাতাল। এর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে গন্ধি মিললেই বোঝা যায় কোথায় যেন শুঁটকি মাছের চাতাল আছে। এলাকার বিভিন্ন সড়কে পতিত জমিতে দেখা যায় শুঁটকির চাতাল।
সাঁথিয়ার ঘুঘুদহর বিল, সোনাই বিল, বড় বিল, ছোট বিল, মুক্তরের বিল, চাটমহরের চলন বিল ও সুজানগরের গাজনার বিল থেকে আমদানি করা হয় মাছ। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে পুঁটি মাছ, বাইম মাছ, চাঁদা মাছ, টাকি মাছসহ বিভিন্ন দেশিয় জাতের মাছ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এসব চাতালে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন শুঁটকি উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। শুঁটকি মাছের মান ভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভালো মানের) শুঁটকি মাছ মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। সাধারণত এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে রয়েছে মিঠা পানির শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা।
সাঁথিয়ার সাতানির চর, আরাজী গোপিনাথপুর, হুইখালী, কলাগাছি, রঘুনাথপুরসহ প্রত্যন্ত বিল এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার শুঁটকি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন। শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত নাজমা, জুলি, ইয়াসমিন, ফারুক, হাবলু, তাহমিনাসহ বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ শ্রমিক জানান, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে শুঁটকির বাজার মূল্য ২০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। চলতি মৌসুমে বিল এলাকা থেকে সংগ্রহকৃত মাছ থেকে ১১০ থেকে ১২৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উত্পাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা হবে বলে শুঁটকি ব্যবসায়ীসূত্রে জানা গেছে।
আরাজী গোপিনাথপুর ও সাতানির চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, ‘আমার চাতাল থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪ মেট্রিক টন শুঁটকি মাছ উত্পন্ন করে আড়তে পাঠাই। এখানকার পুঁটি শুঁটকির ভারতে সবচেয়ে বেশি কদর রয়েছে। আর অন্যান্য মাছ এখানে লোকালে চলে। তবে সবচেয়ে বেশি চলে চিটাগাং ব্যবসায়ীদের নিকট। তারা ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।’
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী মত্স্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমরা শুঁটকির ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা পাঠিয়েছি মত্স্য মন্ত্রণালয়ে। তিনি বলেন, শুঁটকি মাছের তদারকি এবং সরকারি প্রশিক্ষণসহ সবধরনের সহযোগিতা ও নজরদারির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
সুত্র; ইত্তেফাক/ কৃপ্র/ এম ইসলাম