কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ২৬০ প্রজাতির মাছ আছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থার উপাত্ত ও গবেষণা থেকে জানা যায় বাংলাদেশে বিপন্ন প্রজাতির মাছের সংখ্যা শতাধিক। অপরিমিত পানি ও কৃষিতে কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার,শিল্পায়নের ফলে পানিদুষণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে দেশি মাছের প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন কমছে। বিদেশি মাছের অনুপ্রবেশও এর একটি কারণ।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার, বিপন্ন প্রজাতির মাছগুলোকে চার ভাগে ভাগ করেছে সংকটাপন্ন, বিপন্ন, চরম বিপন্ন ও বিলুপ্ত। সংকটাপন্ন মাছের মধ্যে আছে ফলি, বামোশ, টাটকিনি, তিতপুঁটি, আইড়, গুলশা, কাজুলি, গাং মাগুর, কুচিয়া, নামাচান্দা, মেনি, চ্যাং ও তারাবাইন।
বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে আছে চিতল, টিলা, খোকশা, অ্যালং, কাশ খাইরা, কালাবাটা, ভাঙন, বাটা, কালিবাউশ, গনিয়া, ঢেলা, ভোল, দারকিনা, রানি, পুতুল, গুইজ্যা আইড়, টেংরা, কানিপাবদা, মধুপাবদা, পাবদা, শিলং, চেকা, একঠোঁট্টা, কুমিরের খিল, বিশতারা, নেফতানি, নাপিত কই, গজাল ও শালবাইন।
চরম বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে আছে ভাঙন, বাটা, নান্দিনা, ঘোড়া মুইখ্যা, সরপুঁটি, মহাশোল, রিটা, ঘাউড়া, বাছা, পাঙ্গাশ, বাঘাইড়, চেনুয়া ও টিলাশোল। আইইউসিএন বলছে বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রজাতির কোনো মাছ নেই।
বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের মাছের জীববৈচিত্র্য: সংরক্ষণ ও বর্তমান অবস্থা পরিপ্রেক্ষিত” শীর্ষক গবেষণা করে যাচ্ছে। ওই গবেষণা থেকে জানা যায় বর্তমানে মাছের জীববৈচিত্র্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় ১০ বছর ধরে করা আইইউসিএনের তালিকাভুক্ত সাধারণ মাছের অনেকগুলোই এখন সংকটাপন্ন, সংকটাপন্নগুলো এখন বিপন্ন, বিপন্নগুলো চরম বিপন্ন এবং চরম বিপন্নগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
বর্তমানে শতাধিক মাছ বিপন্ন হওয়ার পথে। গবেষণা অনুযায়ী, আগের ৫৪টা ছাড়াও নতুন যে মাছগুলো বিপন্ন হওয়ার পথে সেগুলো হলো: করিকা, বাঁশপাতা, দিবাড়ি, এক ধরনের চেলা, দুই ধরনের পাথর চাটা, দাঁড়ি, ভোল, গোয়ালপাড়া লোচ, রাঙা রুই, ঘরপুইয়া, নান্দিল, এক ধরনের কুটাকান্তি, গাং টেংরা, ঢাল মাগুর, নোনা বাইলা, কাচকি বাটা, নেফতানি, দুই ধরনের পোয়া, চার ধরনের বেলে, এক ধরনের চান্দা, পিপলা শোল, কানপোনা, দুই ধরনের একঠোঁট্টা ও এক ধরনের কুমিরের খিল অন্যতম।
কেন শতাধিক মাছ বিপন্ন? পানিতে প্রচুর কীটনাশক ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যরে দুষণ, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার, জলাশয় দখল ও ভরাট এবং ২৪টি বিদেশি মাছের অনুপ্রবেশের ফলে এতগুলো মাছ আজ বিপন্ন। বিদেশি মাছগুলোর মধ্যে তেলাপিয়া, কার্ফু, থাই সরপুঁটি, আফ্রিকান মাগুর, পিরানহা দেশি মাছের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে
গবেষণায় উঠে এসেছে।
কী করণীয়ঃ দেশি এই প্রজাতিগুলো পুনরুদ্ধারে কী করণীয় জানতে চাইলে এই গবেষকরা তাদের সুপারিশে বলেন, কী কী মাছ ছিল, কী কী মাছ আছে, সে ব্যাপারে দেশব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি জরিপ হওয়া দরকার। জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষ মাছের হিমায়িত শুক্রাণু (স্পার্ম প্রিজারভেশন) ব্যবহার করতে হবে। মাছগুলো রক্ষা করতে হলে নদীর সঙ্গে বিলের সংযোগ এবং মাছের বিচরণ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখনো যেসব প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, দীর্ঘমেয়াদি উন্নত মানের অভয়াশ্রম তৈরি করে তাদের বংশ বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে হবে। মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করতে হবে। মাছগুলো যাতে হারিয়ে না যায় এবং বিপন্নপ্রায় মাছগুলো যাতে পুনরুদ্ধার করা যায়, সে জন্য হাওর, বাঁওড়, বিল ও নদীতে ৪৬৩টি অভয়াশ্রম তৈরি করা।
কৃপ্র/ এম ইসলাম