‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জরিমানা আদায়ে উদ্যোগী, কিন্তু সংযোগ দিতে আগ্রহী নয়’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করেও পাননি নাটোরের সিংড়া উপজেলার কৃষকরা। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় এ এলাকার তিন হাজারের বেশি কৃষক সংকটে পড়েছেন। এ কারণে অবৈধভাবে বাসাবাড়ি থেকে মাঠের মধ্য দিয়ে লাইন টেনে সেচকাজের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কৃষকরা জানান, অবৈধ সংযোগে সেচকাজ চালাতে গিয়ে প্রতি মাসে নির্ধারিত বিলের চেয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জরিমানা আদায়ে উদ্যোগী, কিন্তু সংযোগ দিতে আগ্রহী নয়। তবে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, মাঠে বিদ্যুতের লাইন না থাকায় সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সিংড়া উপজেলার শুকাশ, ইটালি ও রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়নে কৃষকরা সাত বছর আগে জমিতে সেচের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করেন। এসব কৃষকের আওতায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। কৃষকরা জানান, এসব এলাকার বিভিন্ন মাঠে ধান ও সরিষার পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সেচের জন্য ডিজেলচালিত ইঞ্জিনই প্রধান ভরসা। কিন্তু ডিজেলচালিত ইঞ্জিনে ফসল উৎপাদনের খরচ বেশি হওয়ায় বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার আবেদন জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু সাত বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিও সংযোগ দিতে আগ্রহী নয়।
বামিহাল গ্রামের কৃষক এএম দুলাল বলেন, সাত বছর ধরে আমরা সেচের জন্য আবেদন করে আসছি। কিন্তু স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তিনি আরো বলেন, উচ্চতার কারণে চাষের জমিতে ইরি ও বোরো মৌসুমে সেচ দিতে পানির খরচ বেশি পড়ে। তাছাড়া ডিজেলচালিত ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিতে গেলে খরচ দ্বিগুণ হয়। এ কারণে ফসল উৎপাদন করেও কৃষকরা লাভের মুখ দেখে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেচের জন্য সংযোগ না দেয়ায় অবৈধভাবে বাসাবাড়ি থেকে লাইন টেনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য প্রতি মাসে নির্ধারিত বিলের চেয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করছে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। প্রতি মাসে জরিমানা থেকে বড় অংকের অর্থ আয় হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগে দিতে আগ্রহী নয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। কিন্তু মাঠের মধ্য দিয়ে লাইন টেনে বিদ্যুৎ ব্যবহার যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। লাইন ছিঁড়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সংযোগের ব্যাপারে বারবার আবেদন করেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাতে কর্ণপাত করেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুুল জলিল বলেন, তিনটি ইউনিয়নের তিন হাজার কৃষকের একটি সমস্যা, সেটা হলো বিদ্যুৎ। এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কয়েকবার ধরনা দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এ কারণে বাধ্য হয়ে আমরা বাসাবাড়ির লাইন মাঠের ভেতর দিয়ে টেনে সেচকাজে ব্যবহার করছি।
কৃষক আবদুল মজিদ বলেন, সেচের জন্য স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কয়েকবার আবেদন করেছি। কিন্তু তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বাসাবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে সেচকাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি।
রাজু আহমেদ নামের আরেক কৃষক বলেন, বাসাবাড়ির লাইন সেচকাজে ব্যবহার করার কারণে প্রতি মাসে নির্ধারিত বিলের সঙ্গে অতিরিক্তি ১ হাজার ৫০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। আমরা নিয়মিত জরিমানা পরিশোধ করে যাচ্ছি, কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।
বিদ্যুতের জন্য কৃষকদের সমস্যার কথা স্বীকার করেন নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মঞ্জুরুল হুদা। তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে কৃষকদের সমস্যা লাঘবের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সিংড়া জোনাল শাখার উপমহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, মাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা বিপজ্জনক। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য গ্রাহকদের নিরুত্সাহিত করতে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তার পরও কৃষকরা অবৈধভাবে লাইন দিয়ে সেচকাজ পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সিংড়ায় সাড়ে তিন হাজার সেচপাম্প রয়েছে। সেচ সংযোগের জন্য আবেদন বন্ধ নেই। ওই অঞ্চলে বৈদ্যুতিক লাইন টানা হলে সেচের জন্য সংযোগ দেয়া হবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম