ড. মো. হুমায়ুন কবীর: সম্প্রতি সিএনএনের বরাত দিয়ে ছোট্ট একটি সংবাদ সবার চোখেই পড়ার কথা। সেই সংবাদটি ছোট্ট হলেও একেবারে আতকে উঠার মতো ভয়াবহ। বিশ্বের জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তাঁর গবেষণার মাধ্যমে এ ছোট্ট খবরটি বিশ্ববাসীর জন্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যদি পৃথিবীর বাইরে নিরাপদ কোন আবাসস্থল খুঁজে না পাই তবে খুব শিগগিরই আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। ‘এ ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম’ খ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নভেম্বর ২০১৬ সালের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ইউনিয়নের এক সমাবেশে এ কথা জানান।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র, জলবায়ুর পরিবর্তন, রোবটের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে আগামী এক হাজার বছরও হয়তো মানুষ পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবে না। তাঁর মতে, এক হাজার বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বাইরের গ্রহগুলোতে বাসস্থান তৈরী করতে পারলেই আমাদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীতে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা কমে গেলেও সময়ের সঙ্গে তা বাড়তে থাকবে। আর সেজন্যই আগামী একহাজার থেকে দশহাজার বছরের মধ্যে মানুসকে পৃথিবী ছাড়তে হবে। এ কারণেই পৃথিবী ছেড়ে অন্যসব গ্রহে ও নক্ষত্রে আমাদের ছড়িয়ে যেতে হবে। এটি কোন কল্পনা কিংবা স্বপ্ন বা বিলাস নয়। বর্তমানে যেভাবে দৈনন্দিন আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগুচ্ছে তাতে এমনটি হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দৈব দানবের মতো তেড়ে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা।
এমন একটি সময় ছিল যখন পরিবেশ বিষয়টিকেই বুঝতে চাইত না উন্নত বিশ্ব। তারা মনে করতো তাদের উন্নয়নটাই বড় কথা। কে মরল, কে বাঁচল সেটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলনা। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নই শেষ কথা। চলছিলও তাই। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে পরিবেশের বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা বিবেচনায় নিতে শুরু করেছে তখনই, যখন দেখতে পেল এর দুর্বিপাক থেকে তারাও রেহাই পাচ্ছে না। গবেষণায় এমনও রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, এখন থেকে প াশ বছর পরে নাকি খোদ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউজও ছয় ইি পানির নিচে চলে যাবে। তারপরেই মূলত তাদের টনক নড়তে শুরু করেছে। পরিবেশ বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয় কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ)।
আর সেসময় থেকে পরিবেশ জলবায়ু, পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে জলবায় পরিবর্তনের বিষয়টি সবার গোচরীভূত হচ্ছে। অপরদিকে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজের উদ্যোগেই ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ নামে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফান্ড সৃষ্টি করে সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সস্কার ও পুনর্বাসন কাজে ব্যয় করছেন। তাছাড়া আগামী ২০২০ সালের মধ্যে যেন প্যারিস চুক্তিটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় সেজন্য তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য যাতে প্রতিশ্রুত তহবিল সময়মত অনুদান হিসেবে ছাড় করা যায় সেটির উপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য রেখেছেন। আর তাঁর এ বক্তবের সপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সম্মেলনের অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বিগত ২১টি জলবায়ুর সম্মেলনের মধ্যে প্যারিসের কপ-২১ সম্মেলনটি ছিল ইতিহাসের একটি মাইলফলক। কারণ তার আগের ২০টি সম্মেলনে অর্থাৎ বিশটি বছর সেই সফলতাটি পাওয়ার জন্য কাজ করে গেছেন। সেখনেই শত্রু-মিত্র, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু, সরস-নিরস, উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম, শক্তিধর-শক্তিহীন, সম-অসম সব ধরেনের দেশের সমন্বয়ে প্রায় দুশোটি দেশ একতাবদ্ধ হয়ে এক কাতারে এসে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছিল। তারমধ্যে প্রধানতম ছিল কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে তামপমাত্রার ক্রমবর্ধমান ধারা কমিয়ে এনে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে তা ১ দশমিক ৫ এর ভিতরে রাখা। সেখানে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি পর্যন্ত গ্রহণ করা যেতে পারে, তার বেশি নয়। তবে সম্মেলন চলাকালে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে দর কষাকষি চলছিল তাতে কিছু হতাশা থাকলেও শেষ দিনে এসে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। কারণ আগেই বলেছি, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত যেকোন ইস্যুতে বাংলাদেশ সবসময়ই উদ্যোগী এবং নেতৃত্বের ভূমিকায়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত থাকাটাই অনেক কাজে দিয়েছে। কারণ সেখানে ১৯৬টি দেশের প্রায় ৩০ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৮০টি দেশের। আর যাঁরাওবা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের মধ্যেও একটি দায়সারা গোছের বক্তব্য ও অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে এসেছেন শুধুমাত্র আসার জন্য। আবার কেউকেউ আসলেও তারা তেমন কোন অবদান রাখেননি। এর অবশ্য কিছু যৌক্তিক কারণও খোঁজে পাওয়া গেছে। কারণগুলো হলো: এক. এমনিতেই কার্বন, ক্ষতিকর গ্যাস, শিল্পবর্জ্য ইত্যাদি মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত ও চীনসহ যেসব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অবদান সবচেয়ে বেশি, তারাই বিশ্বের অর্থনীতি ও শক্তির নিয়ামক। যদিওবা গতবছর কপ-২১ প্যারিস সম্মেলনে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তাদেরকে একটি বাধ্যবাধকতা চুক্তির ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল, তারা আসলে মন থেকে তাতে সম্মতি দেয়নি।
দুই. সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচেনে সরকার পরিবর্তনের কারণে সেখানে নতুন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের এসব আন্তর্জাতিক চুক্তির বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন। সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের কোন মতামতই প্রকাশ করেনি। বরং তারা সামনের ট্রাম্প প্রশাসনের উপর মুখাপেক্ষি থেকে নিরাপদে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে মাত্র।
তিন. যেহেতু গতবছর (কপ-২১) যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি এবং অনেকটা তাদের চাপে পড়েই চীন ও ভারতের মতো অনেক দেশ তাপমাত্রা হ্রাস বিষয়ে একমত হয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল তারাও এবার দোদুল্যমান অবস্থানে থেকে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে। চার. আর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনসহ অন্য যেকোন কিছু কারণে অর্থপ্রদান সেটা তাদের জন্য এক ধরনের জরিমানা হিসেবে মনে করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। কাজেই নানা অজুহাতে সেই ফান্ডে অর্থপ্রদান না করার জন্য ফন্দি-ফিকির করছেন তারা। সেজন্য যত ধরনের দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি করে সেটাকে একধাপ এগেিয় আর তিনধাপ পিছিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
এভাবে সম্মেলনের বিফলতার অনেক ফিরিস্তি তুলে ধরা যাবে। কিন্তু মারাকাসে উপস্থিত ছিলেন এমন অনেকের সাথে ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সেখানে উপস্থিত হওয়াটাই অনেক গুরুত্ব বহন করেছে। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশে তাঁর নিজের গৃহীত ব্যবস্থাদি অন্যদেরকে জানাতে পেরেছেন। তাছাড়া তিনি নিজের দেশের জন্যই নয় বক্তব্য রেখেছেন বিশ্ব জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলার বিষয় নিয়ে। তিনি সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কথা বলে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সেটি হল- জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত অভিগাত মোকাবেলায় উদ্বাস্তু, অভিবাসী ও শরনার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য প্যারিসে প্রতিশ্রুত বিভিন্ন তহবিলের অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যার যার হিস্যা বুঝিয়ে দেওয়া।
আমরা জানি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ সাল পর্যন্তযে মহাপরিকল্পনা জাতিসংঘ কর্তৃক বিভিন্ন দেশের জন্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে মোট ১৭টি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তারমধে ৬ নম্বর লক্ষ্যমাত্রাটি হলো ‘সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা’ যাকে এসডিজি-৬ নামে অভিহিত করা হচ্ছে এবং এগুলো গ্রহণের মাধমে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মারাকাস জলবায়ু সম্মেলন থেকে ফিরে এসে তাই এ বিষয়ক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন করেছেন। তিনি এখন জাতিসংঘের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পানি বিষয়ক প্যানেলের একজন বিশেষ উপদেষ্টা।
সেখানে তিনি এসডিজি-৬ অর্জনেও বাংলাদেশে ইতিপূর্বে অর্জিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মত রোল মডেল বা অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পরিবেশ সচেতনতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ যেসকল উদ্যোগ ও সাফল্য অর্জন করেছে সেগুলোর কয়েকটি হলো- বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে, ৬১ শতাংশ মানুষ পয়ঃনিষ্কাষণ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় এসে গেছে। শেখ হাসিনার সরকারই ১৯৯৯ সালে জাতীয় পানি ও ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়্যারেজ অ্যাক্ট-১৯৯৬, জাতীয় নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাষণ নীতিমালা-১৯৯৮, পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২০১০, পানি আইন-২০১৩ এবং ন্যাশনাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন অ্যাক্ট-২০১৪ ইত্যাদি প্রণীত হয়েছে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মারাকাসে বক্তব্য দেওয়ার পর সকলের দৃষ্টি চলে গেছে এটির উপর। আর সে কারণেই জলবায়ু বিষয়ে যে বাংলাদেশ আগে থেকেই অনেক দূর পর্যন্ত তাদের কাজ এগিয়ে রেখেছে সেটিও প্রমাণ হলো তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। তাই বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনের নেতৃত্বদানকারী দেশের মর্যাদা ধরে রেখেছে। ইতিপূর্বে ১৯৯৭ সালে কোপেন হেগেনে বাংলাদশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার প্রস্তাব করেছিলেন, যা তাঁর প্রস্তাব মতই ২০১৫ সালের এসে প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত হলো। ঠিক সেরকমভাবেই এবারো মারাকাস সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সহযোগিতায় সহজ শর্তে অনুদানের অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি (লস অ্যান্ড ড্যামেজ), গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড ইত্যাদির বাইরেও নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাষনের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দের জন্য উন্নত দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টির জন্য কথা বলেন তিনি।
এগুলোও মারাকাস ঘোষণায় স্থান পেয়েছে। তাঁর এ বক্তব্য কমপক্ষে ৪৮টি দেশ একবাক্যে সমর্থন জানিয়েছেন। সেখানে তাঁর এমন নেতৃত্বসুলভ বক্তব্য প্রদান থেকে আমাদের দেশের যারা পরিবেশবাদী সংগঠন রয়েছে তারাও শেখ হাসিনার এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান সম্পর্কে সম্যক ধারণা করতে পেরেছেন। এবারের জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষযক্ষতি। এ ব্যাপারে মারাকাস সম্মেলনের ঘোষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয় ও ক্ষতির ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম অনুযায়ী পাঁচবছরের একটি ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হবে।
এই ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত, অভিবাসন ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্থানান্তর ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এ প্রসঙ্গে ইউএনএফসিসি’র নির্বাহী সেক্রেটারি প্যাট্রিসিয়া স্পেপনিশো বলেছেন, মারাকাস জলবায়ু সম্মেলন প্যারিস চুক্তি কার্যকরে লক্ষ্য অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নে নতুন যুগের সূচনা পাবে এ বিশ্ব। উন্নত দেশগুলো ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা পূরণে এখন থেকেই কাজ করতে হবে।
জলবায়ু অর্থায়নে মারাকাস সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট কোন ঘোষণা না এলেও কিছু দেশ এডাপটেশন ফান্ড ও গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। সম্মেলন চলাকালে এডাপটেশন ফান্ডে ৮১ মিলিয়ন ডরার ও ক্লাইমেট টেকনোলজি ফান্ডে ২৩ মিলিয়ন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড়া এ পর্যন্ত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে ২৫ কোটি ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়েছে। সম্মেলনের রীতি অনুযায়ী সামনের কপ-২৩ সম্মেলন ফিজিতে হওয়ার কথা হলে সেখানে ছোট্ট একটি দেশের পক্ষে এতবড় একটি ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে বিধায় তা জার্মানির বন শহরে হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কপ-২২ মারাকাস সম্মেলনের পর্দা নামে। কাজেই এটিকে একদিকে আশার এবং অপরদিকে নিরাশার সম্মেলন বলা চলে।
লেখক: ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষিবিদ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
কৃপ্র/ এম ইসলাম