কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁও এ ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে কেঁচো জৈব সার। সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে পার্শবর্তী এলাকায় বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন সেখানকার কৃষকরা। নিজের গবাদি পশুর গোবর ও বিশেষ জাতের কেঁচো দিয়ে বাড়িতে প্রয়োজন মতো রিং বসিয়ে তৈরি হচ্ছে এ সার। সিমেন্টের তৈরি রিং-এ ৩/৪ ভাগ গোবর দিয়ে প্রথমত ২শ’ থেকে ২৫০টি কেঁচো ছেড়ে দিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে কেঁচোগুলো বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মল এবং মুখের বিশেষ লালা দিয়ে তৈরি করে কেঁচো জৈব সার। পরের বারে এ সার তৈরি হবে ১৫-২০ দিনেই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ব্লকের কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, শতক প্রতি ২/৪ কেজি সার প্রয়োগ করতে হবে। কৃষকেরা নিজের চাহিদা মিটিয়ে এ সার বিক্রি করতে পারেন কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা দরে। ছোট বালিয়া গ্রামের কৃষকেরা প্রতি মাসে প্রায় ২ টন সার বিক্রি করছেন। যার মূল্য প্রায় ২৪ হাজার টাকা। ওই ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক পরিবার নিজ বাড়িতে সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করছেন, ও ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাদের এই গ্রাম এখন “কেঁচো জৈব সার ভিলেজ” হিসেবে পরিচিত।
২০১৫ সালে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলীর পরামর্শে বালিয়াতে এই সার তৈরির কাজে মনোনিবেশ করেন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও শহরের হাজীপাড়ায়। ওই বছর জুলাই মাসে চুয়াডাঙ্গার মাহফুজুর রহমানের কাছ থেকে প্রথম কেঁচো সংগ্রহ করেন তিনি। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় বিনামুল্যে রিং ও বিশেষায়িত কেঁচো সরবরাহ করা হয় বালিয়ার প্রায় ১শ’ পরিবারকে। ওই পরিবারগুলো কেঁচো জৈব সার বাড়িতেই তৈরি করে নিজেদের ফসলে ব্যবহার শুরু করেন টএবং অভাবনীয় সাফল্য পান। এ সাফল্যে কথা আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে বালিয়া ইউনিয়নের বগুলাডাঙ্গী ও ছোট বালিয়ার সাড়ে ৫ শতাধিক পরিবার এ সার তৈরি করতে শুরু করেন এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হন।
বালিয়া ইউনিয়নের বগুলাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, তিনি ওই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কেঁচো জৈব সার তৈরির জন্য বাড়িতেই ৪টি রিং বসিয়েছেন। তার রিংয়ের সার তিনি পিয়াজ, মরিচ, আলু ও লালশাক ক্ষেতে প্রয়োগ করে আগের তুলনায় অনেক বেশি ফসল পেয়েছেন। একই গ্রামের আব্দুল আজিজ, রফিকুল ইসলাম ও হাসান আলীসহ আরও অনেক কৃষক এ সার ব্যবহারে আগের চেয়ে অনেব বেশি ফসল পেয়েছেন। তারা জানান, কেঁচো জৈব সার ব্যবহার করলে আমাদের আর অন্য কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না।
সনেকা বেগম নামে এক কিষাণি জানান, তিনি বাড়িতে একটি রিং বসিয়ে নিজেই জৈব সার তৈরির দেখাশুনা করতে পারছেন। এ পর্যন্ত নিজের ক্ষেতে এ সার প্রয়োগ করার পর অতিরিক্ত সার প্রতি ২ মাসে ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন।
এ রকম সফল হওয়ার গল্প আরও জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ছোট বালিয়া গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলামের কাছ থেকে। তিনি মাত্র ১ বিঘা জমিতে এ সার প্রয়োগ করে লাউ ও করলার চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত ফলনকৃত লাউ, করলা বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ফলনে তিনি খুব খুশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী জানান, কোন প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ভিটামিন ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ করলে ভবিষ্যতে দেশের কৃষকেরা অনেক উপকৃত হবে। এমনকি জমির উর্বরতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। এ সার প্রয়োগের পর নতুন করে কোন প্রকার পোকা-মাকড় ক্ষেতে আক্রমণ করতে পারবে না। বালিয়া ব্লকের কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের সহযোগিতায় ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৭ শতাধিক পরিবার এ সার তৈরি করছেন। তার মতে যেহেতু এ অঞ্চলে জৈব সারের অভাবে ফসল আশাতীত হয় না। সে কারণে ভার্মি কম্পোস্ট অর্থাৎ কেঁচো জৈব সার হতে পারে কৃষকদের সহায়ক।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম