কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চুক্তিভিত্তিক চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত ‘নিরাপদ’ আম ইউরোপে রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রথম চালান গেছে ইউরোপের তিন দেশ ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে। আজ মঙ্গলবার ভোরে দুই টন আমের একটি চালান জার্মানি যাওয়ার কথা রয়েছে।প্রাথমিকভাবে রপ্তানি হচ্ছে সাতক্ষীরাও মেহেরপুরের হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম। এরপরে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন জাতের আম রপ্তানি করা হবে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা।
মাটি ও আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুর থেকে কীটনাশক ছাড়া আম এবারই প্রথম রপ্তানি হচ্ছে ।ফলে আম চাষীদের মধ্যে ব্যপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। আমচাষীরা আশা করছে আগামীবছর থেকে তারাও ব্যাগ পদ্ধতিতে আমচাষ করে বিদেশে আম রপ্তানি করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে হিমসাগর আমকে ছড়িয়ে দিতে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৫ সালে উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগে জেলার ১৫টি বাগান নির্বাচন করা হয়। রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান সেসব বাগান থেকে প্রথমবারের মতো এবার ৪৫ হাজার আম সংগ্রহ করবে। নির্ধারিত বাগানগুলোতে গাছের আমে কার্বন ব্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে। আমচাষীদের প্রতিটি কার্বোব্যাগ কিনতে হয়েছে ৪ টাকা করে। এসব ব্যাগ দুই বছর ব্যবহার করা যাবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের একটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, ওই আমবাগানে ৭০টি হিমসাগর আমের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার আম বাছাই করে সেগুলো এক ধরনের কার্বন ব্যাগ পরিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে প্রতিটি গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা ঝুলে আছে।
আম চাষীরা জানান, আমে আটি(বড়া) আসার পর থেকেই বাছাই করা আমে ওই ব্যাগ পরানো হয়েছে। ওই ব্যাগ পরানোর ফলে রোদ, বৃষ্টি এমনকি পোকামাকড় আমকে ক্ষতি করতে পারবে না। এ ধরনের ১৫টি বাগান থেকে ৫০ হাজার আম বাছাই করে ব্যাগে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৪৫ হাজার আম রপ্তানী করা হবে। গত ২৫ মে থেকে ওই আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আম রপ্তানি নতুন নয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে, গত বছরও ৫২২ টন আম ইউরোপে রপ্তানি হয়েছে। তবে এত দিন সাধারণ বাগান অথবা বাজার থেকে কিনে আম রপ্তানি করা হতো। এবারই প্রথম ইউরোপে আম রপ্তানিতে চুক্তিভিত্তিক চাষ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নইলে কোনো রপ্তানিকারককে আম রপ্তানির জন্য ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট (পিসি) দিচ্ছে না ডিএই।
এ মৌসুমে বালাইমুক্ত আম উৎপাদনে আগে থেকেই উদ্যোগী হয় সরকার। বাগান বাছাই করে তাতে ডিএই, হর্টেক্স ফাউন্ডেশন, বেসরকারি সংস্থা সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এবং কয়েকজন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (গ্যাপ) অনুসরণ ও চুক্তিভিত্তিক চাষ নিশ্চিত করা হয়।
আম রপ্তানির কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহেদ খন্দকার বলেন, যারা গ্যাপ অনুসরণ করেছে, তাদের আম রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এভাবে রপ্তানি করতে পারলে বাংলাদেশের বদনাম কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আগামী বছর আরও ব্যাপকভাবে চুক্তিভিত্তিক চাষ ও গ্যাপ অনুসরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, এ মৌসুমে প্রথম আম রপ্তানি করেছে মেসার্স ইসলাম এন্টারপ্রাইজ। কোম্পানিটির মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৭ মে তিনি ইতালি ও ফ্রান্সে প্রথম চালানে এক টন করে আম পাঠান। এরপরে যুক্তরাজ্যে একটি চালান পাঠানো হয়।
এদিকে, জার্মানিতে রপ্তানির জন্য সাতক্ষীরার একটি বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে তা রাতে বিমানবন্দরে এনেছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ন্যানো। কোম্পানিটির মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে জার্মানিতে দুই টন আমের একটি চালান যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে ১০ লাখ ১৮ হাজার টন আম উৎপাদিত হয়।
কৃপ্র/এম ইসলাম