কৃষি প্রতিক্ষণ রাঙ্গামাটিঃ রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ছয়নালছড়া, শিয়ালদাইলুই ও ব্যাটলিং মৌজার প্রতিটি পাহাড়ে কমলা লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে । এখানের প্রতিটি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে থোকা থোকা কমলা। জনশ্রুতি রয়েছে, রসালো ও সু-স্বাদু কমলার জন্য বিখ্যাত সাজেকের কমলা। কিছু দিন পরে সাজেক পাহাড়ে গেলে ফিকে হলুদ রঙের কমলার বাগান দেখে মন ভরে যাবে।
সাজেকের রুইলুইপাড়া থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ছয়নালছড়া গ্রাম। এ গ্রামে যাওয়ার পথ অনেকটাই কষ্টকর। মূল সড়কের পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে নামলেই দাড়িপাড়া গ্রাম পড়ে। এরপর দেড় হাজার ফুট উঁচু আরও একটি পাহাড় বেয়ে নিচে নামলে ছয়নালছড়া। তবে পাহাড়ি ছড়া ধরে ঘন্টা দেড়েক পায়ে হেঁটে গেলে মিলবে ছয়নালছড়া গ্রাম। এখানেই দেখা যাবে অনিল চাকমা ও বুদ্ধ মনি চাকমার কমলা বাগান।
সাজেকের পাহাড়ের পাদদেশে ঢালু জায়গায় প্রতিটি টিলায় কমলার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এক একটি টিলায় দুইশ’ থেকে তিনশ’ কমলার গাছ রয়েছে। বাগানগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। এসব বাগানে এ বছর কমলার ফলন খুব ভালো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চাষীরা বলছেন, সাজেক পাহাড়ে কমবেশি প্রতিটি পরিবার কমলা চাষ করে থাকেন। এখানকার মানুষ শুধু জুম চাষের ওপর নির্ভলশীল ছিল না। জুম চাষে ফলন ভালো না পাওয়ায় এখানকার অধিকাংশ পরিবার কমলা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে এসব বাগান গড়ে তুলেছেন তারা। সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে তাদের আরো উপকৃত হতেন বলে চাষিরা মনে করেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ২৫৮ একর জমিতে কমলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সাজেক ইউনিয়নে এক হাজার ২২৩ একরে কমলা চাষ করা হয়। সাজেক ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কমলা চাষ হয় টলিং,তুইছুই,ছয়নালছড়া,লংকর ও মাচালং এলাকায়। বাকি ৩৫ একর কমলা বাগান অন্য ইউনিয়নে। এ মৌসুমে কমলা উৎপাদন হবে এক হাজার ৫০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সাজেক ইউনিয়নে এক হাজার ৪৩ মেট্রিক টন। উৎপাদিত কমলার ৬০ শতাংশ রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বাজারজাত করা হয়। বাকি ৪০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
ছয়নালছড়া গ্রামের অনিল চাকমা বলেন, তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে কমলা বাগান করেছেন । যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরও লাভবান হতেন ।
ছয়নালছড়া গ্রামের বুদ্ধ মনি চাকমা বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় গত বছর ২২ হাজার কমলা ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। এবার ক্রেতা পেলে পুরো বাগানের কমলা বিক্রি করে দেবো। তিনি আরো জানান, তার বাগানে দুই হাজার কমলার গাছ রয়েছে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানান, সাজেকের রুইলুই এলাকা এখন পর্যটক কেন্দ্র হওয়ায় কমলা চাষিরা কমলার ভালো দাম পাচ্ছেন। পর্যটকেরা প্রতিদিন কয়েক হাজার কমলা কেনেন। পর্যটক না এলে কমলার বাজার পড়ে যায়। তখন কমলা চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে কমলা চাষ বহুগুন বৃদ্ধি পাবে। তখন সাজেকের কমলা দিয়ে পুরো দেশের চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ শাহিনুল ইসলাম বলেন, সাজেকের মাটি কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মাটিগুলো উর্বর হওয়ায় সেখানের কমলাগুলো মিষ্টি ও রস বেশি। তিনি আরো জানান, কমলা চাষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে যাতে তারা ভালোভাবে কমলা চাষ করতে পারেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম