কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁতশিল্পকে আরও আধুনিক ও বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শিল্পের প্রসারে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপই নেবে তাঁর সরকার । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মসলিনের ওপর চার ইঞ্চি জরির কাজ করতে পুরোটা দিন লেগে যায়।এই যে তারা মনযোগ দিয়ে একটি বস্ত্র তৈরী করছেন এটাও তো একটি অত্যন্ত উন্নতমানের শিল্প। কাজেই এটাকে আরো বেশি সহযোগিতা করার জন্য আমাদের সরকার সব সময় প্রস্তু এবং আমরা তা করে যাব।’ তিনি বলেন,‘এই শিল্প যেন আরো উন্নত হয়, সম্প্রসারিত হয়, সেদিকেই আমরা নজর দিচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর ফার্মর্গেটস্থ কৃষিবিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ তাঁতী লীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তাঁত বোর্ডকে ডিজিটাইজড করার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ও দেশে প্রতিষ্ঠা করেছি ।
তাঁত শিল্পের উন্নয়নকে কিভাবে আরো সম্প্রসারিত করা যায় সেটাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তাঁতীদের মেধা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে।
। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তাঁতী লীগের আহবায়ক এনায়েতুর রহমান চৌধুরী। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ তাঁতী লীগের যুগ্ম আহবায়ক সাধনা দাস গুপ্তা। প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিনকে আবার ফিরিয়ে আনায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁত শিল্পের প্রসারে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ৪২৬টি তাঁতের বিপরীতে ১৪২ জন তাঁতীকে ৪৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁতীদের প্রশিক্ষণের জন্য নরসিংদীর তাঁত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে আমরা আরো উন্নত করেছি। সেখানে ৪ বছর মেয়াদে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল কোর্স চালু করা হয়েছে এবং এতে ভর্তির ক্ষেত্রেও তাঁতী পরিবারের সদস্যদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সিলেটে মনিপুরি তাঁত শিল্পের উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ৬শ মনিপুরি তাঁত শিল্পীকে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ তাদের পণ্য বিক্রিতে সিলেটের জিন্দাবাজারের ‘ওয়েস্ট ওয়াল্ড শপিং সিটিতে’ একটি বিপনী কেন্দ্র খোলা হয়েছে। রংপুরের সতরঞ্জি এখন বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। সেখানে বেসিক সেন্টার এবং প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাঁত শিল্প চরম অবহেলার স্বীকার উল্লেখ করে তাদের ভাগ্যোন্নয়নে সংগঠন নেতৃবৃন্দকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠন মানে কিন্তু কেবল নেতা হয়ে বসে থাকা নয়।
প্রধানমন্ত্রী ’৯৬ সালে তাঁর সরকার গঠনের পর সরকারের নানামুখী উদ্যোগে তাঁত শিল্প, সিল্ক শিল্প গড়ে ওঠে এবং এক সময় সেই শিল্প হারিয়েও যায় বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তাঁতী লীগের সম্মেলন হচ্ছে, নতুন নেতৃত্ব আসবে। আপনারাই আপনাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন এবং তাঁতীদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং বংশ পরম্পরায় তাদের মেধাকে কাজে লাগাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মূখ্য দায়িত্ব হবে তাঁত শিল্পের বাজার সম্প্রসারণ করা। এক সময় বাংলাদেশের দুরাবস্থার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক বেলা খাবার, মোটা কাপড় জুটতো না, রোগে চিকিৎসা পেতনা, রোগে ধুঁকে ধুকে মারা যেত, লেখা পড়াতো ছিল অনেক পরের ব্যাপার। কঠোর পরিশ্রম করে আমরা এই সব সমস্যা ও অভাব দূর করে দেশের উন্নতি করেছি। দেশে এখন কেউ আর না খেয়ে থাকে না।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম