কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ফেনী জেলার তিন হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় ফেনীর ছয় উপজেলায় ১০ টন উফশী আউশ বীজ, ৮ টন নেরিকা আউশ বীজ, ৫৬ টন ইউরিয়া সার, ২৮ টন ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট), ২৮ টন এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) ও ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে দাগনভূইঞা ছাড়া বাকি পাঁচ উপজেলায় প্রণোদনার পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। তবে নগদ অর্থ আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিতরণ করা হবে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করে খরচ তুলতে না পেরে কিছুটা হতাশ হলেও সরকারি এ প্রণোদনা পেয়ে পুনরায় ফসল ফলাতে উত্সাহী হয়ে উঠছেন ফেনীর প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচির আওতায় ফেনী সদর উপজেলার ৩৭৫ জন কৃষককে ১ হাজার ৮৭৫ কেজি উফশী আউশ বীজ, ১৫০ জনকে ১ হাজার ৫০০ কেজি নেরিকা আউশ বীজ, ৫২৫ জনকে ১০ হাজার ৫০০ কেজি ইউরিয়া সার, ৫ হাজার ২৫০ কেজি ডিএপি, ৫ হাজার ২৫০ কেজি এমওপি ও ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২০০ কৃষককে ১ টন উফশী আউশ বীজ, ১২০ জনকে ১ হাজার ২০০ কেজি নেরিকা আউশ বীজ, ৩২০ জনকে ৬ হাজার ৪০০ কেজি ইউরিয়া সার, ৩ হাজার ২০০ কেজি ডিএপি, ৩ হাজার ২০০ কেজি এমওপি ও ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে ২৫০ কেজি উফশী আউশ বীজ, ১ হাজার কেজি ইউরিয়া সার, ৫০০ কেজি ডিএপি, ৫০০ কেজি এমওপি ও ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। পরশুরাম উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে ২৫০ কেজি উফশী আউশ বীজ, ১ হাজার কেজি ইউরিয়া সার, ৫০০ কেজি ডিএপি, ৫০০ কেজি এমওপি ও ২০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
দাগনভূঞা উপজেলায় ৩৫০ কৃষককে ১ হাজার ৭৫০ কেজি উফশী আউশ বীজ, ১৫০ জনকে ১ হাজার ৫০০ কেজি নেরিকা আউশ বীজ, ৫০০ জনকে ১০ টন ইউরিয়া সার, ৫ টন ডিএপি, ৫ টন এমওপি ও ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হবে। এ উপজেলায় আজ এসব কৃষিপণ্য বিতরণ করা হবে। সোনাগাজী উপজেলায় সর্বাধিক ৯৭৫ কৃষককে ৪ হাজার ৮৭৫ কেজি উফশী আউশ বীজ, ৩৮০ জনকে ৩ হাজার ৮০০ কেজি নেরিকা আউশ বীজ, ১ হাজার ৩৫৫ জনকে ২৬ হাজার ৫০০ কেজি ইউরিয়া সার, ১৩ হাজার ৫৫০ কেজি ডিএপি, ১৩ হাজার ৫৫০ কেজি এমওপি ও ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রতি কৃষক উফশী আউশ চাষের জন্য পাঁচ কেজি বীজ, নেরিকা আউশ চাষের জন্য ১০ কেজি বীজ, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি ডিএপি, ১০ কেজি এমওপি করে প্রকারভেদে ৪৫-৫০ কেজি সার ও বীজ পাচ্ছেন। এছাড়া আগাছা দমন ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য উফশী চাষীর জন্য ৪০০ ও নেরিকা চাষীর জন্য ৮০০ করে টাকা দেয়া হচ্ছে। আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এসব টাকা রূপালী ব্যাংকে কৃষকদের নামে করা অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়েছে। সময় ও প্রয়োজনমতো কৃষকরা শিউর ক্যাশের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করে উৎপাদন কাজে ব্যয় করার কথা রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নের আইপিএম ক্লাবের সভাপতি মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে উৎপাদনে বিমুখিতা দেখা দিয়েছিল। সরকার চলতি মৌসুমে সার, বীজ ও নগদ অর্থসহায়তা দেয়ায় কৃষকদের মাঝে আবার উত্সাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মো. খালেদ কামাল জানান, কৃষকদের উৎপাদনে উত্সাহ দিতে সরকার দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ফেনীতে প্রাপ্ত কৃষি প্রণোদনার অর্থ ও উপকরণ প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম