‘নেত্রকোনায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বন্যায় নেত্রকোনার প্রায় সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও হাওড়াঞ্চল প্লাবিত। গত এক সপ্তাহের অবিরাম বর্ষণ পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে ফসলি জমিতে। তলিয়ে গেছে বোরো ফসলের ক্ষেত। কৃষকরা কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পালের তথ্য অনুযায়ী, পানির চাপে কয়েকটি উপজেলায় বাঁধ ভেঙে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। বৈঠকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত নগদ ১১ লাখ টাকা ও ১৫১ টন চাল ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গতকাল থেকে বিতরণ করা হচ্ছে ত্রাণ। এছাড়া দুর্গত এলাকায় সরকার ঘোষিত ১০ টাকা কেজির চাল সার্বক্ষণিক বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন আকন্দ।
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মোহনগঞ্জের চর-হাইজদা বাঁধ ভেঙে জেলার সবচেয়ে বড় হাওড় ডিঙ্গাপোতা ও কীর্তনখোলা বাঁধ ভেঙে পাঙ্গাসিয়াসহ জেলার বিভিন্ন হাওড়ে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদন, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ে উজানের ঢলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে মোহনগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও মদন উপজেলার ফতেপুর, মাঘান, গোবিন্দশ্রী, মদন, তিয়শ্রী ইউনিয়নেও। মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়ন ও মদন উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ফতেপুর ইউনিয়নের হাওড়াঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ জানান, জেলায় কয়েক হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অবহিত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের মাঝে এখন ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি চলছে। এ রকম আরো পদক্ষেপ নেয়া হবে। সার-বীজ প্রণোদনাসহ সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত হাওড়াঞ্চল পরিদর্শন করে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন জানান, ডিসি মিটিংয়ে হাওড়াঞ্চলের ৩১ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাকি অংশ সম্পন্নের জন্য জেলা প্রশাসক সন্মেলনে সুপারিশ করা হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অবহেলায় ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক শাকিল আহম্মেদ বলেন, পাউবোর দায়িত্বে অবহেলা এবং বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারের অনিয়মের কারণে ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। কর্তব্যে অবহেলার জন্য পাউবো কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আর্জি জানান তিনি। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু তাহের বলেন, উপজেলায় সব বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে কোনো রকম অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম