কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আম উৎপাদনে রাজশাহী প্রথম হলেও স্বাদের দিক থেকে মেহেরপুরের আম প্রথম। মাটি ও আবহাওয়ার কারণে মেহেরপুরের সুস্বাদু হিমসাগর আম এবার দেশের বাইরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেও তার সুনাম ছড়াতে যাচ্ছে। মেহেরপুর থেকে কীটনাশক ছাড়া আম এবারই প্রথম বৈদেশীক মুদ্রা অর্জন করতে যাওয়ায় আম চাষীদের মধ্যে অন্য ধরনের উৎসাহ দেখা দিয়েছে। আমচাষীরা আশা করছে কীটনাশক ছাড়া আগামীবছর থেকে তারাও ব্যাগ পদ্ধতিতে আমচাষ করে বিদেশে আম রপ্তানী করতে পারবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে হিমসাগর আমকে ছড়িয়ে দিতে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৫ সালে উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগে জেলার ১৫টি বাগান নির্বাচন করা হয়। রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান সেসব বাগান থেকে প্রথমবারের মতো এবার ৪৫ হাজার আম সংগ্রহ করবে। নির্ধারিত বাগানগুলোতে গাছের আমে কার্বন ব্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে। আমচাষীদের প্রতিটি কার্বোব্যাগ কিনতে হয়েছে ৪ টাকা করে। এসব ব্যাগ দুই বছর ব্যবহার করা যাবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের নির্বাচিত একটি আমবগান ঘুরে দেখা গেছে, ওই আমবাগানে ৭০টি হিমসাগর আমের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার আম বাছাই করে সেগুলো এক ধরনের কার্বন ব্যাগ পরিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে প্রতিটি গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা। আম চাষীরা জানান, আমে আটি আসার পর থেকেই বাছাই করা আমে ওই ব্যাগ পরানো হয়েছে। ওই ব্যাগ পরানোর ফলে বাহিরের কোনো রকম রোদ, বৃষ্টি এমনকি পোকামাকড় আমকে ক্ষতি করতে পারবে না। এ ধরনের ১৫টি বাগান থেকে ৫০ হাজার আম বাছাই করে ব্যাগে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৪৫ হাজার আম রপ্তানী করা হবে। গত ২৫ মে থেকে ওই আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের আমচাষী ওবাইদুর রশিদ সুমন বলেন, তার বাগানের আম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রফতানির খবর জেনে তিনি আনন্দিত। তিনি বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যে আমগুলো নিচ্ছে সেগুলোর ভালো দাম পাওয়া যায়। এতে আমচাষীরা বিদেশে রপ্তানি করার জন্য উৎসাহিত হবেন এবং আমগাছ পরিচর্যায় আরো যত্মবান হবেন।
আমচাষীরা বলেন, বিদেশে আম রপ্তানির জন্য যে আম বাছাই করা হয়েছে সেগুলো যত নেয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাগান মালিকেরা । রপ্তানি করা আমের ভালো দাম পাবেন কিনা, সেটা নিয়ে শংসয় রয়েছে তার। তিনি বলেন, ভালো দাম পেলে আমচাষীরা বিদেশে আম রপ্তানি করতে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান ই্উনিয়ন প্রতিনিধি মফিজুর রহমান বলেন, গত বছর সাতক্ষীরা থেকে কিছু আম রপ্তানি করা হয়েছিল । একই সঙ্গে মেহেরপুরের আম নেয়া যাবে কিনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর এ বছরই প্রথম মেহেরপুর থেকে ৪৫ হাজার হিমসাগর আম নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফেব্রুয়ারী মাস থেকে এ এলাকার ৩শ’ জন আমচাষীকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৫ জন আমচাষী আম রপ্তানির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ওই ১৫টি বাগান থেকে ৪৫ হাজার আম বাছাই করে সেগুলোকে ব্যাগ পরানো হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে যে দামে বিক্রি করা হবে তার কয়েকগুণ বেশী দাম পাবেন ওই চাষীরা । ফলে দাম নিয়ে সমস্যা হবে না বলে তিনি জানান।
ব্যাগে আম পরানো বিষয়ে মফিজুর বলেন, ব্যাগে সংরক্ষণ করলে আমের বোটা শক্ত হবে এবং আমটি বাইরের যে কোনো ক্ষতিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পাবে এবং রঙ নষ্ট হবে না। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেহেরপুরের আম দেশের সবচেয়ে সুস্বাদু আম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ বছরই প্রথম মেহেরপুরের সুস্বাদু হিমসাগর আম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান চাষীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে ব্যাগ পদ্ধতিতে আমচাষ করে বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনের।