ড. মো. হুমায়ুন কবীর: শ্রমের মর্যাদার সাথে মে দিবসের যে বিরাট সম্পর্ক রয়েছে তা এমনি এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। এ সম্পর্কটি সৃষ্টি করার জন্য শত- সহস্র শ্রমিকের জীবন দিতে হয়েছে রাজপথে। খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে শ্রমিকদের রাতদিন পরিশ্রম করে যখন তারা মালিকদের মন পেতো না। উপরন্তু হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও মালিকের মন ভরাতে পারতো না তখন থেকেই যুগে যুগে তাদর কাজের জন্য কর্মঘণ্টা নির্ধারণের আন্দোলন চলতে থাকে। সর্বশেষ ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রে হে মার্কেটে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রম দেওয়ার জন্য দাবী করে সেখানে রাস্তায় শুয়ে প্রতিবাদ করার সময় সেখানকারর আন্দোলনরত শ্রমিকদের জীবন দিয়ে তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করে নিতে সমর্থ হয়। সেই থেকে সকল পর্যায়ের শ্রমিকের জন্য বিশ্বজুড়ে ২৪ ঘণ্টায় মধ্যে মাত্র ৮ কর্মঘণ্টা কাজ করার অধিকার আদায় করে নেয়।
সেই ৮ ঘণ্টা কাজ যে শুধু খেটে খাওয়া শ্রমিকের জন্যই প্রযোজ্য হলো তাই নয়। এখন তা সকল অফিসের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়েই অন্তত নিয়ম রক্ষার জন্য হলেও ৮ ঘণ্টার অফিস ডিউটি কিংবা অফিস টাইম দেওয়া থাকে। যেমর আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি অফিসই হলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অর্থাৎ ৮ কর্মঘণ্টা। এরমধ্যে অফিসের ইমারজেন্সির উপর ভিত্তি করে তা কমবেশি হতে পারে। অপরদিকে বেসরকারি অনেক অফিসে একেবারে এর বিপরীত চিত্রও দেখতে পাওয়া যায়। সেসব স্থানে দেখা গেছে অফিসে ঢোকার একটি নির্ধারিত সময় থাকলেও সেখান থেকে বের হওয়ার নেই কোন নির্দিষ্ট সময়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অফিসসমূহ, তৈরী পোশাক কারখানাসহ অন্য আরো বিভিন্ন শিল্প কল কারখানাওএর মধ্যে রয়েছে।
তবে একটি বিষয়এখন সবাই কমবেশি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, আর সেটি হলো ওভার টাইম। অর্থাৎ নির্ধারিত ৮ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত সময় কাজ করলে অনেকে সে সময়টা হিসাব করে সেটার জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে। অথচ একটা সময়ে তা কোথায়ও চালু ছিলনা। আর সেজন্যইতো মূলত শ্রমিকদের আন্দোলন করে যেতে হয় এখনো। শ্রমের সংজ্ঞাটি অনেক বিস্তৃত।
একজন বিজ্ঞানী গবেষণা করলেও তিনি যেমন শ্রম ব্যয় করছেন, অপরদিকে একজন মাটি কাটার শ্রমিক যে মাটির ঢালাটি মাথায় নিয়ে যায় তিনিও শ্রমিক। যে কৃষক তার নিজের জমিতে কাজ করে তিনিও কিন্তু এক ধরনের শ্রম সাধন করেন। কথাটি হলো শুধু কায়িক শ্রম নাকি বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শারীরিক শ্রম সেটি বিবেচনা করা।
তবে কথা হলো যে যিনি যে শ্রমই সাধন করুন না কেন, কোন শ্রমই ছোট কিংবা খাটো নয়। যার যার স্থানে প্রত্যেকের কাজটিই সত্য ও সুন্দর এবং মর্যাদাকরও বটে। প্রত্যেকেরই যার যার কাজের উপর তার একটি আত্মমর্যদা রয়েছে। একজন সুইপারের কাছে যেমন তার কাজটি তার নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য অপরিহার্য। ঠিক তেমনি একজন অফিস ম্যানেজারেরও তার কাছে এবং তার প্রতিষ্ঠানের কাজেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
মে দিবস উপলক্ষে এদিন বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে দিনব্যাপী নানা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে উদযাপনের জন্য র্যালি ও মিছিল করে তা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে। থাকে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি এবং রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানান কর্মসূচি। সবমিলিয়ে দিনটি বিশ্রামের ভিতর দিয়ে ভালই কাটে তাদের জন্য। কিন্তু জনসাধারণের কিছুটা ভোগান্তি হয় যানবাহন না চলার কারণে। তারপরও শ্রমিকদের এ দিবসটির প্রতি সবাই একাত্ম হয়ে এসব কষ্টকে কোন কষ্টই মনে করেন না তারা।
কাজেই মে মাস এলেই আমরা শুধু ১ মে-তে শ্রমিকের মর্যাদা বা অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে তা নয়। প্রয়োজন সকলের সকল ধরনের শ্রমকে সব সময়ের জন্য স্বকীয় মর্যাদায় আসীন করা। এটাই হোক এবারে মে দিবসের শ্রমিকের জন্য বড় কামনা।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃপ্র/এম ইসলাম