‘হাওড়ে হাঁস ও মাছের মড়কের কারন বিষাক্ত পোকা ও ধান পচা’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ হাওড়ের বন্যার পানিতে ধান পচে গিয়ে বন্যার পানিতে ধান পচে গিয়ে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে যায়। এতে মরতে থাকে মাছ। আর ধানক্ষেত থেকে পানির সঙ্গে পাড়ের দিকে ভেসে আসা বিষাক্ত পোকা খেয়ে মারা যায় হাঁস।সম্প্রতি বন্যাকবলিত হাওড়ে মাছ ও হাঁসের মৃত্যু নিয়ে এমন তথ্যই দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। হাওড় পর্যবেক্ষণের পর সংগৃহীত নমুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ তথ্য জানান তারা।
এ অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, গত ১২ চৈত্র বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওড়ের ধান তলিয়ে যায়। আগাম বৃষ্টির কারণে অপরিপক্ব ধান বা দুধ-ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে তা পচে যায়। অপরিপক্ব ধানের কার্বোহাইড্রেট পচে হাওড়ের পানিতে বায়োলজিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা (বিওডি) বেড়ে যায় এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে ধান তলিয়ে যাওয়ার প্রায় ২২ দিন পর মাছের মড়ক দেখা দেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান এবং মাছের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, ধানের পচনের কারণেই পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে মাছের মৃত্যুর কারণ ধান। তবে হাওড়ের এ দুর্যোগের পরিণাম এখনই শেষ নয়, আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বৃষ্টির পর রোদ হলে ধানের খড়ের পচনে পরিবেশ আরো দূষিত হয়ে মাছের রোগ বা মৃত্যু হতে পারে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টির ওপর নজর রাখতে হবে।
মাছের পাশাপাশি হাঁসের মৃত্যুর কারণও অনুসন্ধান করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে হাওড়ের বোরো ধানক্ষেতে প্রচুর পোকামাকড় জন্মায়, এগুলোর মাঝে অনেক বিষাক্ত পোকামাকড়ও থাকে। বিষাক্ত পোকামাকড় খাওয়ায় হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। হালির হাওড় থেকে পাওয়া মৃত হাঁসের রক্তের ডিএনএ মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের ল্যাবে বিশ্লেষণ করে রক্তে কোনো বিষাক্ত দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। হাওড়ে ১৯ ধরনের মাছ ও জলজ প্রাণীর পোনাও পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞ টিমের পরীক্ষা অনুযায়ী হালির হাওড়ের পানির পিএইচ (অ্যাসিডিটি) ও অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬.৬৬-৬.৮৩ ও ৪.৩০-৪.৭৬, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম। পানির তাপমাত্রা ছিল ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং পানিতে কোনো অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইটের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এ কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পানির অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র চক্রবর্তীর পৃষ্ঠপোষকতায় এ অনুসন্ধানে বিশেষজ্ঞ টিমে সদস্য হিসেবে ছিলেন অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম রহমত উল্লাহ, ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম নওশাদ আলম, অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী রেজা ফারুক, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এ কে শাকুর আহম্মদ।
কৃপ্র/এম ইসলাম