কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নড়াইলে সেচ সংকটের কারণে অনাবাদি কৃষিজমি জমির পরিমাণবাড়ছে।বোরো মৌসুমে সেচ সংকটের কারণে নড়াইলের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪১ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। আর ধান উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ২৪৮ টন। প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদনে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার ৮০০ লিটার পর্যন্ত পানির প্রয়োজন হয়। এ পানির অন্তত ৯৫ ভাগই আসে ভূগর্ভ থেকে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে দিন দিন পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে সেচযন্ত্র দিয়ে আগের মতো পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র বলছে, প্রভাবশালীদের দখলের কারণে খাল-বিলসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয় কমে যাওয়া, অপরিকল্পিতভাবে সেচ মেশিন স্থাপন, নদী ও খালে জোয়ার-ভাটা হ্রাসসহ নানা কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে। বর্তমানে সদর উপজেলার মাইজপাড়া, হবখালী, শাহবাদ, চণ্ডীবরামপুর, কলোড়া, বিছালী ইউনিয়ন ও লোহাগড়া উপজেলার নলদী, লাহুড়িয়া, জয়পুর ও শালনগর ইউনিয়নে প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত খাবার পানির সংকট দেখা দেয়। ওইসব এলাকায় সাধারণত পানির স্থিতিতল ২৫ ফুটের নিচে থাকলে স্বাভাবিকভাবে পানি উত্তোলন করা যায়। কিন্তু বোরো মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত) পানির স্থিতিতল ৩৫ ফুটের নিচে চলে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সদর ও লোহাগড়া উপজেলায় পানির সংকট দেখা দেয়। এতে ব্যাহত হয় সেচনির্ভর কৃষি আবাদ। প্রতি বছরই পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।
নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলার কৃষকরা জানালেন সদর উপজেলার মাইজপাড়া, হবখালী, শাহবাদ, চণ্ডীবরামপুর, কলোড়া, বিছালী ইউনিয়ন ও লোহাগড়া উপজেলার নলদী, লাহুড়িয়া, জয়পুর ও শালনগর ইউনিয়নে বিভিন্ন বিলে বোরো মৌসুমে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এ সময় বেশির ভাগ সেচ মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে। যেসব মেশিনে পানি ওঠে, সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরে পানির অভাবে অন্তত ৫০ ভাগ জমি অনাবাদি থাকবে।
কৃষকদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) উজিরপুর অর্গানিক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো. শান্ত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে সারা দেশের মতো নড়াইলেও পানির স্তর ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। ফলে অনেক এলাকায় বোরো আবাদ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, ‘বোরো মৌসুমে নড়াইল জেলায় কিছু এলাকায় পানির সমস্যা দেখা দেয়। বোরো উৎপাদন করতে অনেক বেশি পানির প্রয়োজন। পানি সংকটের কারণে কৃষকদের বোরোর পরিবর্তে অন্যান্য ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম