কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : গাছ থেকে আম অনায়াসে চলে আসবে নিচে। পড়বে না, আঘাত পাবে না, কষ ছড়াবে না, ডালও ভাঙবে না। গাছ থেকে এভাবে আম নামানোর আধুনিক ঠুসি (ম্যাঙ্গো হারভেস্টর) উদ্ভাবন করেছেন একজন চাষি। এই চাষির নাম হযরত আলী। বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিগ্রামে। তিনি গ্রামের শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের ব্যবস্থাপক। প্রচলিত পদ্ধতিতে গাছ থেকে আম নামাতে গেলে বোঁটা ভেঙে আমের সারা গায়ে কষ ছড়িয়ে পড়ে। আমপাড়ুয়ার চোখেমুখেও কষ লাগে। যেখানে লাগে, সেখানে ঘা হয়ে যায়। সহজে সারে না। শুধু তা-ই নয়, কষের কারণে আম ‘অ্যানথ্রাকনোজ’ ছত্রাকে আক্রান্ত হয়। পাকতে না-পাকতেই আম পচে যায়। বোঁটা থেকেই এর পচন শুরু হয়। আবার ঠুসি থেকে বের হয়েও নিচে পড়ে যায়। আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আঘাত লাগা আম পাকার আগেই পচে যায়। আম ঠুসিতে পড়ার কারণে লগি ভারী হয়ে যায়। ধরে রাখতে কষ্ট হয়। হযরত আলীর ঠুসির ক্ষেত্রে তা হবে না। আম সরাসরি নিচে চলে আসবে। লগি ভারী হবে না।
প্রচলিত আম পাড়ার ঠুসির মতোই এই ঠুসি তৈরির জন্য একটি বাঁশের লগির প্রয়োজন হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে লগির মাথায় দড়ি দিয়ে তৈরি জালের একটা ঠুসি বাঁধা থাকে। গাছে ঝুলে থাকা আম ঠুসিতে ভরে টান দিয়ে ছিঁড়তে হয়। তখন আম বোঁটা থেকে ছিঁড়ে ঠুসির ভেতরে পড়ে। একসঙ্গে কয়েকটি আম ঠুসিতে ভরে তারপর ঠুসি কাছে এনে আম নামানো হয়।
শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, বুয়েটের এক সাবেক ছাত্র ঠুসির লগির সঙ্গে একটি কাপড় লাগিয়ে ঠুসি থেকে সরাসরি আম নিচে নামানোর পদ্ধতি বের করেন। এটা দেখে হযরত আলী প্রস্তাব করেন ঠুসির মুখে একটি কাটার যন্ত্র লাগাতে পারলে বোঁটার একটু ওপর থেকে কেটে নেওয়া যাবে। বোঁটাসহ কাটতে পারলে কষ বের হবে না। জাহাঙ্গীর শাহ হযরত আলীর এ ধারণাটা কাজে লাগিয়ে ঠুসির মাথায় একটি কাটার যন্ত্র লাগিয়ে দেন।
তার সঙ্গে একটি রশি বেঁধে নিচ থেকে কাটার যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করেন। এই ঠুসির ভেতরে গাছে ঝুলে থাকা আম ভরে নিচের রশিতে টান দিলেই বোঁটার ইচ্ছামতো দূরত্ব থেকে কেটে নেওয়া যায়। কাটার সঙ্গে সঙ্গে আম ঠুসি থেকে কাপড়ের পাইপের মধ্য দিয়ে সরাসরি নিচে চলে আসে। জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, লগির গায়ে রেইনকোটের কাপড় দিয়ে আম নিচে নামানোর পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ একটি ঠুসি তৈরি করতে প্রায় ২০০ টাকা খরচ হয়। আধুনিক ঠুসি বানাতে প্রায় ৬০০ টাকা খরচ হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠুসির সঙ্গে কাঁচি লাগিয়ে আম পাড়ার পদ্ধতি বের করেছে। তবে ওই ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতির মতোই ঠুসি ভরে গেলেই আম নামাতে হয়। কিন্তু হযরত আলীর এই পদ্ধতি আরও এক ধাপ আগানো। এই পদ্ধতিতে আম সরাসরি নিচে চলে আসে।’