কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক:সজিনা জনপ্রিয় এক বিশেষ ধরনের সবজি আর পাতা উপকারী শাক। সজিনা মুখে রুচি বাড়ায়। তাই রোগীর পথ্য হিসেবে অনন্য। এর বীজ হতে উৎপন্ন তেলের নাম ‘বেন ওয়েল’। মানুষের খাবারের পাশাপাশি পশুখাদ্য, ঘড়ি মেরামত, পানিশোধক, রঙ ও কাগজ তৈরিতে সজিনার ব্যবহার সমাদৃত। বহুগুণে গুণান্বিত সবজির মধ্যে এর স্থান শীর্ষে। এ কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকায় সজিনাকে বলা হয় ‘জাদুকর গাছ’। তাই এর গুণাগুণ জেনে নেয়া দরকার।
পুষ্টিগুণঃ সজিনা কেবল ভিটামিন সি ও ক্যারোটিনসমৃদ্ধ সবজিই নয়, পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ডাঁটায় আহারোপযোগী আমিষ ৩.২ গ্রাম, শর্করা ১১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২১ মিলিগ্রাম, লৌহ ৫.৩ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ভিটামিন এ ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৫ মিলিগ্রাম, খনিজ লবণ ১.৯ গ্রাম, আঁশ ৪.৮ গ্রাম এবং খাদ্যশক্তি আছে ৬০ কিলোক্যালরি। আর পাতায় রয়েছে ৬.৭ গ্রাম আমিষ, ১২.৫ গ্রাম শর্করা, ৪৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ১.৭ গ্রাম চর্বি, ৬৭০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ, ০.০১ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি২, ২২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২.৩ গ্রাম খনিজ লবণ, ০.৯ গ্রাম আঁশ এবং ৯২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি। শুকনো পাতায় এর পরিমাণ আরও অধিক। সজিনাপাতায় দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক আছে। পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকার কারণে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ উপাধি দেয়া হয়।
ভেষজগুণ : সজিনা প্রায় তিনশ’ রোগের প্রতিকার এবং প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। দেহের গুরম্নত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি ও লিভারকে সচল রাখে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস এবং শরীরের কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানো, মায়ের দুধের পরিমাণ বাড়ানো, হজমে সহায়তাকরণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণেও রাখে বিরাট ভূমিকা। এ ছাড়া ক্যান্সার, বস্নাডপ্রেসার, অ্যানিমিয়া, কিডনির পাথর, বন্ধ্যত্ব, হার্টের ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথাসহ আরও নানা রোগের জন্য বেশ উপকারী।
শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করতে সজিনার ডাটা সিদ্ধ করে চিবিয়ে খেতে হয়। এ ছাড়া কৃমিনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে কাজ করে। ফলের নির্যাস ধনুস্টংকার, প্যারালাইসিস, যকৃত ও পস্নীহাজনিত রোগের উপকার করে। সজিনার পাতা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। জ্বর ও সর্দি সারাতে সজিনাপাতার কার্যকারিতা বেশ। নিয়মিত পাতার রস খেলে শ্বাসকষ্ট দূর হয়। পাতা বেটে টিউমার এবং ফোড়ায় ব্যবহার করলে উপকার হয়।
দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ায় কিংবা রক্ত দেখা দিলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে সজিনা পাতা গরম করে নিয়মিত দু’তিনবার কুলকুচা করতে হবে। এভাবে ৭-৮ দিন ব্যবহার করলে প্রতিকার পাওয়া যায়। ৮-১০ ফোঁটা পাতার রস, সেই সঙ্গে এক কাপ পরিমাণ দুধ মিশিয়ে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে। পাকা পাতার ২-৩ চামচ রস খাবারের আগে খেলে উচ্চরক্তচাপ কমে যায়। তবে ডায়াবেটিস রোগীকে এ রস খাওয়ানো যাবে না।
কুকুরে কামড়ালে সজিনা পাতা পিষে এর সঙ্গে পরিমাণমতো হলুদ, রসুন, গোলমরিচ ও লবণ মিশিয়ে খেলে বিষ নষ্ট হয়ে যায়। সাপেকাটা রোগীর জন্য এর মূল ও বীজ ব্যবহার হয়। কানসহ শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা হলে কিংবা ফুলে গেলে সজিনার শিকড় বেটে রস বের করে প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।
এম ইসলাম