‘পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশের বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৫২ হাজার কোটি টাকা’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকাসহ দেশের অন্যআন্য শহরগুলো মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে। আর এ পরিবেশ দূষণের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশই হচ্ছে দূষণের কারণে। গতকাল রবিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের পরিবেশগত সমীক্ষা-১৮’র প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পার্লকার। প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতিবছর শহরাঞ্চলের পরিবেশ দূষণে দেশের ক্ষতি হচ্ছে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার। এটি দেশের মোট জিডিপির অর্ধেক, অর্থাৎ ৩.৪।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে সুউচ্চ ভবন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ৭৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাবনার মতো ছোট শহরেও ৫০ শতাংশের মতো জমি হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশে বায়ু দূষণের ফলে প্রতি বছর মোট জিডিপি এক শতাংশ হ্র্রাস পাচ্ছে। নন-কমপ্লায়েন্স শিল্প ও অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে নগরের বাতাস এবং ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি দূষণ হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রায় ১০ লাখ মানুষ, যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র জনগোষ্ঠী তারা সীসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে ও স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে এবং গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রতিবেদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি ও দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে হলে পরিবেশ দূষণ বিশেষ করে নগরাঞ্চলের দূষণ অবশ্যই কার্যকর ও টেকসইভাবে বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও পরামর্শ দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ’২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের রাষ্ট্রে উপনীত হব। পরিবেশ দূষণ আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর পাশে গেলে এটি আরও পরিষ্কার হয়। তারপরও আমরা পরিবেশ রক্ষার চেষ্টা করছি। দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় সেখানে পর্যটকদের রাত যাপন নিষিদ্ধ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সব পরিকল্পনা শেষ। কিছুদিনের মধ্যেই এটি কার্যকর করা হবে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, আমরা পরিবেশ দূষণ বিষয়ে সচেতন। এ বিষয়ের ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান হাতে নিয়েছি। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির কথা মনে রাখতে হবে। পরিবেশ আইন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সামনের সংসদ অধিবেশনে নতুন পরিবেশ আইন উঠছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনজুরুল হান্নান খান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম লিডার সঞ্জয় শ্রীবাস্তবসহ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা।
কৃপ্র/এম ইসলাম