কৃষি বিজ্ঞানী ড. কে. এম.খালেকুজ্জামান: লেবু জাতীয় গাছের আগা মরা বা এনথ্রাকনোজ (Die back or Anthracnose) রোগ। লেবু জাতীয় গাছের এ রোগ কোলেটোট্রিকাম গ্লোওস্পোরোয়ডিস (Colletotrichum gloeosporioides) নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ: প্রথমে পুরাতন পাতায় ঈষৎ সবুজ রংগের দাগ পড়ে। ক্রমে দাগ বাদামী হয়ে যায় এ রোগ পাতার আগায় ও কিনারায় বেশী হয়। ডালও আক্রান্ত হয়ে আগা থেকে শুরু করে নীচের দিকে ধীরে ধীরে শুকাতে থাকে। ডাল শুকানোর সাথে সাথে পাতা ঝরে পড়ে। এ জন্য গাছে অনেক পত্রবিহীন মরা, অর্ধমৃত অথবা রোগাটে ডাল দেখতে পাওয়া যায়। মরা ডালে অসংখ্য কালো কালো বিন্দুর ন্যায় এসারভূলাস উৎপন্ন হয়। এ সময় গাছে ফল থাকলে রোগ বোঁটাতেও সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত বোঁটা দূর্বল হয়ে ফল ঝরে পড়ে। আক্রান্ত ফলের খোসায় শক্ত কুঁচকানো বাদামী দাগ দেখা যায়। আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করলে তাতে পঁচন দেখা যায়।
রোগের বিস্তারঃ এ রোগের ছত্রাক মাটিতে ও গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বসন্তকালে বৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে কালো বিন্দুগুলো ফেটে কনিডিয়াম বের হয়। বৃষ্টির ছিটা ও বাতাসের সাহয্যে আক্রান্ত গাছ থেকে কনিডিয়াম ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্য গাছকে আক্রমণ করে।
রোগের প্রতিকার: নীরোগ বীজতলার চারা ব্যবহার করতে হবে। গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতি ঘন ডাল পালা ছাঁটাই করে পরিস্কার করে দিতে হবে।
আক্রান্ত অংশ ছাটার সময় দাগের নীচেও কিছুটা সুস্থ অংশ কেটে ফেলতে হবে এবং কাটা অংশে বর্দোপেষ্ট (প্রতি লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন) লাগাতে হবে।
গাছের নিচে ঝড়ে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছকে সতেজ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সুষম সার শিকড়ের চারপাশে দিয়ে পানি সেচ দিতে হবে।
প্রোপিকোনাজোল গ্রুপের ছত্রাকনাশক (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে গাছে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছে স্প্রে করতে হবে।
লেখকঃ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষি বিজ্ঞানী, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব),
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
সম্পাদনায়: এম ইসলাম