কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কৈ মাছ আমাদের দেশের একটি অতি পরিচিত মাছ। কৈ মাছ সাধারণত প্রাকৃতিক জলাশয় যেমন – ডোবা, নালা, খাল –বিল নদী ইত্যাদি যেখানে অল্প গভীরতার পানি দেখা যায় ও চাষ করা যায়। ভিয়েতনামী কৈ মাছ সর্বপ্রথম ভিয়েতনাম থেকে ২০১১ সালে বাংলাদেশে আনা হয় এবং মাছ চাষ শুরু করা হয়। ভিয়েতনামী কৈ এর রঙ ও স্বাদ অনেকটাই দেশী কৈ এর মত কিন্তু খুব বৃদ্ধি পায়। ভিয়েতনামী কৈ মাছ খেতে সুস্বাদু হওয়ার বাংলাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। এ কৈ মাছ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মাত্র ৪ মাসে ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজন হয়। চাষ পদ্ধতি সহজ ও অন্য মাছ চাষের চেয়ে লাভ বেশী। বাংলাদেশের জলাশয় ও আবহাওয়া এই মাছ চাষে উপযোগী। ভিয়েতনাম কৈ মাছ একক অথবা দেশী শিং মাগুর মাছের সাথে মিশ্র-চাষ কারা যায়।
পুকুর নির্বাচন: ভিয়েতনাম কৈ মাছ চাষ করার জন্য কমপক্ষে ৪ থেকে ৬ মাস পানি থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফুট হলে ভাল হয়। তবে এর চেয়ে বেশী গভীরতা হলেও চাষ চলবে। ২০ থেকে ১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুর নির্বাচন করতে হবে তবে এর চেয়ে ছোট বা বড় পুকুর এ মাছ চাষ করা যাবে।
পুকুর প্রস্তুতি:
১.পুকুরের পানি সেচে শুকুয়ি অবাঞ্ছিত মাছ ও অন্যান্য প্রাণী দূর করতে হবে।
২.পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে উঠিয়ে ফলতে হবে।
৩. পুকুরের পাড় ভাল করে মেরামত করতে হবে এবং পাড়ে বড় গাছ থাকলে ডাল-পালা ছাটায় করে ফেলতে হবে ।
৪. পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এবং চুন দেয়ার ২ দিন পর পানি দিতে হবে।
৫. পুকুরে পানি দেয়ার ৩ দিন পর পোনা মজুদ করতে হবে।
পোনা সংগ্রহ ও মজুদ: ভিয়েতনাম জাতের কৈ মাছের পোনা মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেন। কালচার হিসাবে ভিয়েতনাম কৈ প্রতি শতাংশে ৫০০ থেকে ৬০০ পিচ পোনা মজুদ করা যায়। তবে ভিয়েতনাম কৈ এর সাথে প্রতি শতাংশ ১০ -১৫টি কাপ জাতীয় মাছ চাষ করা ভাল । যেমন সরপুঁটি শতাংশে ৫টি রুই ৫ টি মৃগেল ৫টি। এতে পানির পরিবেশ ভাল থাকে । পলিথিনের অক্সিজেন ব্যাগে অথবা প্রাষ্টিকরের ড্রামে পোনা পরিবহন করতে হবে।
ভিয়েতনাম কৈ মাছের খাদ্য তালিকা:
ভিয়েতনাম কৈ মাছের খাদ্য ৩৫-৪০% আমিষ থাকাতে হবে। প্রাকৃতিক খাদ্য হিসবে জু- প্ল্যাংটন, ফাইটোপ্ল্যাংটন, হনসেক্ট, মলাস্কান প্রাণী ইত্যাদি খায় । বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভিয়েতনাম কৈ চাষ করতে হলে ভাসমান ফিস ফিড খাবার দিতে হবে।
আকার
(প্রতি কেজি টি) |
প্রয়োগ হার
(দেহ ওজনের ) |
প্রয়োগ মাত্রা |
৫০০০ | ১০০% | ৪ বারে |
৪০০০ | ৮০% | ৪ বারে |
৩০০০ | ৬০% | ৪বারে |
২০০০ | ৪৫% | ৪ বারে |
১০০০ | ৩৫% | ৪ বারে |
৮০০ | ৩০% | ৪ বারে |
৫০০ | ২৫% | ৪ বারে |
৩০০ | ২০% | ৩ বারে |
২০০ | ১৫% | ৩ বারে |
১০০ | ১২% | ৩ বারে |
৭০ | ১০% | ২ বারে |
৫০ | ৮% | ২ বারে |
৩০ | ৬% | ২ বারে |
২০ | ৪% | ২ বারে |
১৫ | ৩% | ২ বারে |
১০ – ৪ টি | ২.৫% | ২ বারে |
এই তালিকা খাদ্য প্রয়োগ করলে ১ কেজি মাছ উৎপাদন করতে ১৭০০ গ্রাম খাবার লাগবে।
ভিয়েতনামী কৈ মাছ চাষে আয় হবে ?
১ একর (১০০) শতাংশ পুকুরে মাছ চাষ করে কি পরিমিণ আয় করা যায় তার হিসাব নিম্নরুপ:
ব্যয় খাতের নাম: | টাকা |
পুকুর ভাড়া (৬ মাসের জন্য ১ একর =১০০ শতাক) | ২৪,০০০ |
ভিয়তনামী কৈ পোনা ক্রয় ( ১.২ × ৬০,০০০ টি ) | ৭২,০০০ |
চুন প্রয়োগ (১০০ কেজি ১২ টাকা করে) | ১২০০ |
শ্রমিক (১ জন প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে ৪ মাস) | ২০,০০০ |
রোগ ব্যবস্থাপনা | ৫,০০০ |
পরিবহন খরচ | ১০,০০০ |
খাদ্য (প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে ৭৫০০×১.৭×৫০) | ৬,৩৭,৫০০ |
মোট ব্যয়: | ৭,৬৯,৭০০ টাকা |
আয়: ১ একর জলাশয়ে ৬০,০০০ পোনা ছাড়লে ৬০,০০০ পোনা পাওয়া যাবে না। ধরে নিন ১৫- ২০ % পোনা মরে যায়। তাহলে ৬০,০০০ পোনা ছাড়লে ৫০,০০০ কৈ মাছ পাওয়া যাবে। ৪ মাস পরে প্রতিটি কৈ মাছের ওজন হবে ১৫০ – ২০০ গ্রাম। কম করে ধরে , ৫০,০০০ হাজার মাছের মোট ওজন হবে (৫০,০০০×১৫০) = ৭৫০০ কেজি। বর্তমান সময়ে প্রতি কেজি কৈ মাছের বাজার মূল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা । পায়কারী বিক্রয়মূল্য ১৫০ টাকা করে (৭৫০০×১৫০) = ১১,২৫,০০০ টাকা ।
নীট আয় = (১১,২৫,০০০ – ৭,৬৯,৭০০) = ৩,৫৫,৩০০ টাকা।
ভিয়েতনামী কৈ মাছ চাষ করে ৪ মাসে মোট বিনিয়োগের ৪০% থেকে ৪৫% নীট লাভ হয়।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
১.ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ফাংগাস জনিত কোন রোগ না হয় তার জন্য আগে থেকেই প্রতি শতাংশ ১ গ্রাম হারে (৩ -৪ ফুট গভীরতা পানিতে) Timsen ( টিমসেন ) ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।
২. শীতকালে চাষ করার সময় চাষীদের বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে কারন শীতে অনেক সময় মাছে ক্ষতরোগ দেখা তার প্রতিরোগ ব্যবস্থা হিসাবে প্রতি শতাংশ ২৫০ লবণ , ২৫০ চুন বা ১৫০ জিওলাইট ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।
৩. এক পুকুরের জাল অন্য পুকুরে ব্যবহারের আগে ভাল পানির সাথে জিবাণু নাশক পটাশ মিশিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
৪. অনেক সময় বক, মাছরাঙা, জলজ পাখি থেকে রোগ জীবাণুর সৃষ্টি হয়। তাই পুকুরের চারদিকে রঙিন ফিতা টানিয়ে দিন।
প্রয়োজনীয় পরামর্শ:
- মাছের পোনা ১০০ টি কেজিতে আসার পূর্ব পর্যন্ত র্নাসারী খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
- অধিক ঘনত্ব পরিহার করুন ।
- মাছ সঠিকভাবে খাবার খাই কি না সেই দিকে লক্ষ্য রাখুন ।
- ৭ দিন পর পর মাছ ওজন করুন এবং দেহের ওজনের সাথে মিল রেখে খাদ্য প্রয়োগ করুন।
- পুকুরের পানি সেচের বিকল্প ব্যবস্থা রাখুন।
- ব্যাঙ,ডোরা সাপ থেকে মাছের পোনা রক্ষার জন্য পুকুরের পাড় দিয়া ৩ ফুট উঁচু করে নেট জাল দিয়ে বেড়া দিতে পারেন।
- সঠিক জাতের সুস্থ ভিয়েতনামী কৈ মাছের পোনা মজুদ করুন নিশ্চিত মাছ চাষ করে আয় হবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম