কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : টিস্যু কালচার প্ল্যান্ট বায়োটেকনোলজির অন্যতম শাখা যান মাধ্যমে উদ্ভিদের সজীব বিভাজনশীল অংশকে (কোষ,কলা,অংগ ইত্যাদি) উপযুক্ত নিউট্রিয়েন্ট মিডিয়ামে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কারচার করে রোগমুক্ত, মাতৃসদৃশ, অল্প সময়ে অধিকহারে এবং সারা বছর ব্যাপি চারা উৎপাদন করা যায় । যেমন আংগ কালচার, কোষ কালচার,ভ্রুন কালচার,পরাগধানী কালচার,পরাগ রেণু কালচার, প্রোটোপ্লাস্ট কালচার ইত্যাদি । তবে উদ্ভিদের যে আংশই কালচার করা হোক না কেন কালচার পদ্ধতিতে সাধারন্ত নিম্নলিখিত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অনুসরন করা হয়ে থাকে ।
মিডিয়াম প্রস্তুতকরণ : টিস্যু কালচার কাজে সচারচার বিভিন্ন গবেষকগন কর্তৃক প্রদত্ত ফরমুলা অনুয়ায়ী প্রস্তুত নিদিস্ট নিউট্রিমেন্ট মিডিয়া ব্যবহৃত হয়ে থাকে । তথাপি মিডিয়ামের উপাদানের মাত্রা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণা কাজে উপযোগী করার জন্য তার রূপান্তর আনা হয় ।গবেষনাগারে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান নির্ধারিত মাত্রায় মিশ্রন করে মিডিয়াম প্রস্তুত করা হয় অথবা বানিজ্যিকভাবে পূর্ব মিশ্রিত অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়ে তাকে । মিডিয়ামে এই সব উপাদান মোটামুটি ৪টি শ্রেনিতে ভাগ করা হয়ে থাকে । যথা-ক)অজৈব লবন খ)জৈব উপাদান গ) ফাইটোহরমোন ঘ)অপ্রতিরোধি বা নিস্ক্রিয় অবলম্বন ।
ক) অজৈব লবন: অজৈব লবন বলতে ম্যক্রোএলিমেন্ট(নাইট্রোজেন,ফসফরাস,পটাসিয়াম,ক্যালসিয়াম,এবং ম্যাদনেশিয়াম) এবং মাইক্রেএলিমেন্ট( বোরন,কোবান্ট,কপার ম্যাংগানিজ,আয়োডির লৌহ এবং জিঙ্ক)সমূহকে বুঝায় । এসব লবনের স্টক দ্রবন প্রস্তুত করে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষন করা হয় ।
খ) জৈব উপাদান : কার্বোহাইড্রেট : মিডিয়ামে সাধারন্ত সুক্রোজ ২ থেকে ৪% ব্যবহার করা হয় । কোন কোন সময় এই মাত্রার কম বা বেশী ব্যবহার করা জয়ে থাকে ।
ভিটামিন : থাইমিন (০.১ থেকে০.৪মিগ্রা/লি) প্রায় সর্বক্ষেত্রে এবং নিকোটিনিক এসিড(০.৫মিগ্রা/লি)পাইরিডক্সিন(০.৫মিগ্রা/লি)।
এমিনোএসিড : টিস্যু কালচার কাজে এমেো এসিড হিসেবে গ্রাইসিস প্রায়শই ব্যবহার হয় । কখনও কখনও সিষ্টিনও ব্যবহৃত হয় ।
ফাইটোহরমোন : উদ্থিদের আংশ বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য ফাইটো হরমোন বা বৃদ্ধি উদ্দীপক খুবই গুরত্বপূর্ণ যেমন সাইটোকাইনিন এবংঅক্সিন । কোন কোন সময় কান্ডে বৃদ্ধির জন্য জিববারেলিন হরমোন ব্যবহার করা হয় ।
জীবানুমুক্তকরন : জীবানুমুক্ত পরিবেশ টিস্যু কারচার কার্যক্রমের পুর্ব শর্ত ।কালচার করার পূর্বে ব্যবহৃত উদ্ভিদ সামগ্রীসহ ব্যবহৃত সকর যন্ত্রপাতি কালচার মিডিয়াম জীবাণুমুক্ত থাকা এবং সমগ্র কালচার প্রক্রিয়াটিতে জীবাণুমুক্ত অবস্থা বজায় রাথা একান্ত প্রয়োজন । কালচার পাত্রসহ সকল য্ত্রপাতি ব্যবহারের পূর্বে ভালভাবে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করে অত:পর পাতিত জলে কয়েকবার ধূতে হয় ।গবেষনাগারে সাধারনত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ ধৌত করার পরে (প্রতিবর্ঘ ইঞ্চিতে১৫ পাউন্ড চাপে এবং১২১ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ১৮-২০ মিনিট) অটোক্লেভে রেখে জীবাণুমুক্ত করা হয় । নিউট্রিয়েন্ট মিডিয়ামে সাধারণত চিনি বা সুক্রোজ দেয়া হয়ে থাকে, এই সুক্রোজ বিভিন্ন ধরনের জীবানুর (ব্যকটেরিয়া ছত্রাক ইত্যাদি)বৃদ্ধিতে সহায়ক । সুতরাং নিউট্রিয়েন্ট মিডিয়ামে জীবাণুর উপস্থিতি মোটেও অবাঞ্চিত নয় । মিডিয়ামে উপস্থিত এই সব জীবাণু কালচারকৃত টিস্যুর ক্ষতি সাধন করে নষ্ট করে ফেলে । ফলে এসব জীবাণু ধ্বংস করার জন্য মিডিয়ামসহ কালচার পাত্র ভালভাবে কটন প্লাগ দিযে বন্ধ করে অটোক্লেভ করে মিডিয়ামটি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করা হয় । অত:পর তা ইনোকুলেশনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয় ।
উদ্ভিদ সামগ্রী সংগ্রহকরণ : কালচার করার জন্য উদ্ভিদের বিভাজনশীল অংশ সমূহকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ।সংগ্রহকৃত উদ্ভিদ অংশ বা এক্সপ্ল্যান্ট হতে ব্যবহৃত অংম রেখে অব্যবহৃত অংশ বাদ দেঙয়া হয় । ব্যবহৃত এক্সপ্লান্ট গুলির পৃষ্ঠসংলগ্ন ধুলি, ময়লা বা বিভিন্ন জীবাণুমুক্তকরণের উদ্দেশ্যে সেগুলোকে ফ্লাক্সে নিয়ে প্রথমে ট্যাপ ওয়াটার ও পরে কয়েক ফোটা তরল ডিটারজেন্ট (বিবহ-২০) দিয়ে ৫-১০ মিনিট কাল ঝাঁকিয়ে ভালভাবে পরিস্কার করা হয় । অত:পর কয়েকবার পাতিত জলে ভালভাবে ধূয়ে ফেলতে হয় যাতে ময়লা জাতীয় পদার্থ না থাকে । পরবর্তী কার্যক্রম ইনোকুলেশন চেম্বারে সম্পন্ন করা হয় ।
ইনোকুলেশন : ইনোকুলেশন চেম্বারে রক্ষিত চলমান ল্যামিনার এয়ারফ্লো ক্যবিনেটের সামনে এক্সপ্ল্যান্টগুলো জীবাণুমুক্তকরন ও ল্যমিনার এয়ারফ্লো ক্যাবিনেটের সামনে ইনোকুলেশন সম্পন্ন করা হয় । ইনোকুলেশনের কমপক্ষে আধঘন্টা পূর্বে ল্যামিনার এয়ারফ্লো চালু করা হয । অত:পর মিডিয়াসহ ব্যবহৃত নির্জীবকৃত সকল দ্রভ্রাদি ইনোকুলেশন চেম্বারে লামিনারফ্লো সংলগ্ন একটি বিশেষ ট্রলিতে রাখা হয় । অতঃপর পরিস্কার এপ্রোন ও মুখোশ পরে লমিনারফ্লোর সামনে উঁচু চেয়ারে বসে প্রথমে এলকোহল দিয়ে দুই হাত এবং সেই সাথে সংলগ্ন যে ল্যামিনার এয়ারফ্লো টেবিলের ইনোকুলেশন করা হবে তার মেঝেসহ চারপাশ ভালভাবে এলকোহল সিক্ততুলা দিয়ে মুছে অতঃপর স্পিরিটল্যাম্পে পুড়িয়ে ঠান্ডা করে ব্যবহার করা হয় । এরপর জীবাণুমুক্ত পরিবেশে ল্যামিনার এয়ারফ্লোর সামনে পরিস্কারকৃত এক্সপ্লান্টগুলি প্রয়োজন মত স্কালপেল ও ফরসেপ দিয়ে নিদিষ্ট মাপে কাটা হয় । অতঃপর অত্যন্ত সাবধানতার সাথে স্পিরিট ল্যম্পের সামনে কালচার পাত্রে (টেস্টটিউব,টিস্যুকালচার)ঢাকনা খুলে নিবীজকৃত ফরসেপ দ্বারা উক্ত এক্সপ্লান্টটি কালচার মিডিয়ামে দ্রুত উনুকুলেশন করা হয় । উল্লেখ্য যে, ইনুকুলেশনের সময় কালচার বোতল, ফ্লাক্স বা টিউবের মুথ আগুনে ধরে খানিকটা খুব দ্রুত এর মুক খুলে টিস্যুটি সাবধানতার সাথে কালচার মিডিয়ামে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং মুথটি শক্ত করে কটন প্লাগ দিয়ে ভালভাবে বন্ধ করা হয় ।
কালচার চেম্বার : ইনুকুলেশন সম্পন্ন হবার পর কালচারকৃত এক্সপ্লান্ট সহ কালচার পাত্রসহ গ্রোথরুমে ন্থানান্তর করা হয় । এখানে তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আদ্রতা, আরোক তীব্রতা, আলোককাল প্রভিৃতি নিয়ন্ত্রনে রাকা হয় । কালচার পাত্র গ্রোথ চেম্বারে রক্ষিত বিশেষ সেলফে সাজিয়ে রাখা হয় । প্রতিটি সেলপে কালচার র্যাক থেকে নিদিষ্ট দুরত্বে মাজামাঝি আবস্থানে সাদা টিউবলাইট দিয়ে আলোকিত রাখা হয় । এ কক্ষের তাপমাত্রা কমবেশী ২৫ ডিগ্রী সেঃ, আদ্রতা ৫০% এর উপরে , আলোক তীব্রতা ৫০-৬০ এবং আলোককাল ১৪-১৬ ঘন্টা বজায় রাথা হয় । এই রিয়ন্ত্রিত কালচার পরিবেশে নিদিষ্ট সময় পর পর এক্সপ্লান্টগুলির বৃদ্ধি ও বিকাশ পর্যবেক্ষন সাপেক্ষে বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয় ।