কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে নিশ্চিত। এটা পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা নয় এটা নিশ্চিত । এ বিষয়ে তাঁরা গতকাল রোববার বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় পরিবেশবাদীরা এ কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) বলেছে, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না। বরং বিপুলসংখ্যক মানুষের অবৈধ ও অযাচিত হস্তক্ষেপ বনটির যে ক্ষতি করে চলেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা বন্ধ হবে। পরিবেশবাদীদের বক্তব্য সম্পর্কে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কিসের ভিত্তিতে সুন্দরবন ধ্বংস হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হলেন, তা বোধগম্য নয়। এমন কোনো বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বা গবেষণার তথ্য তাঁরা উপস্থাপন করতে পারেননি। অথচ বিষয়টি একেবারেই বৈজ্ঞানিক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মতবিনিময় সভায় বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের উপস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সব বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে সুন্দরবনের ক্ষতি না হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে যেসব বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার প্রায় সবই ২০১২ সাল থেকেই বলে আসা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া বক্তব্যও আগের মতোই। পার্থক্য শুধু এই, এত দিন যে যাঁর অবস্থান থেকে নিজ নিজ বক্তব্য দিয়ে গেছেন। আর গতকাল দুই পক্ষ একত্রে এক সভাকক্ষে বসে কথা বলেছে। সভার পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশবাদী দলের অন্যতম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এই মতবিনিময়ের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব একটুও কমেনি। শুধু একসঙ্গে বসে কথা বলা হয়েছে, এই যা।
মতবিনিময় সভায় মাঝেমধ্যে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়, বিশেষ করে বিআইএফপিসিএল ও মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য উপস্থাপনের সময়। সভা শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এবং জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পরস্পরের বিপরীত অবস্থান ব্যক্ত করেন। তবে সভায় পরিবেশবাদীদের একটি বক্তব্য সরকারপক্ষসহ সবাইকে আগ্রহী করেছে। তা হলো রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য পরিবেশগত সমীক্ষাসহ সব ধরনের সমীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের আরও একটি কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রামপালের অদূরেই বেসরকারি কোম্পানি ওরিয়ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে। ফলে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের জন্য করা সমীক্ষার ফলাফল কীভাবে সেখানে প্রযোজ্য হবে।
সভায় প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি তাঁরা ভেবে দেখবেন। এরপর আবার তাঁরা একসঙ্গে বসারও উদ্যোগ নেবেন। সভায় এ ছাড়া বিদ্যুৎ-সচিব মনোয়ার ইসলাম, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে সুলতানা কামাল ও আনু মুহাম্মদ ছাড়া অধ্যাপক বদরূল ইমাম, এম এম আকাশ, শামসুল আলম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
কৃপ্র/ এম ইসলাম