কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মাছ চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন কয়েক হাজার পরিবার। যাদের এক সময় ‘নুন আনতে পানতা ফুড়াতো’ তারা এখন হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। ফরিদগঞ্জ উপজেলার শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যুবকরা কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পেড়ে, বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াতেন। আজ তারা মাছ চাষে বদলিয়েছেন নিজেদের ভাগ্য। শূন্য থেকে হয়েছেন লাখপতি, কেউ বা কোটিপতিও। উপজেলার ধানুয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন, মিসির আলি, সাইফুল ইসলাম ও রাধা কৃষ্ণ এবছর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ মৎস্য উৎপাদনকারী চাষীর স্বীকৃতি পেয়েছেন উপজেলা মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে। তাদেরকে জাতীয় মৎস্য সম্পাহ উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ মৎস্য চাষীর ক্রেস্ট ও সদন তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার।
ধানুয়া গ্রামের মাছ চাষি জসিম উদ্দিন জানান, ‘১৯৯৩ সালে এসএসসি পাশ করে মোদি দোকান দেই। ২০০১ সাল থেকে সখের বসে মাছ চাষ শুরু করি। পরে ২০০৬ সালে মৎস্য চাষের ট্রেনিং নিয়ে যুব উন্নয়ন থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমি ও আমার ৬ জন বন্ধু মিলে ১৬০ একর জমিতে মাছ চাষ করছি। গত বছর আমরা ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেছি। এ বছর আমাদের চালান খাটছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। আমরা আশা করি এবছর প্রায় ৭ কোটি টাকার মত মাছ বিক্রি করতে পারবো। আমাদের এই মাছের প্রজেক্টে ৬০ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।’ অপর মাছ মৎস্য চাষী মিছির আলীর বয়স ষাটের কোঠায়। এক সময় পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা খেতে কষ্ট হতো। কিন্তু মাছ চাষ করে তিনি নিজের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। তার মাছের ঘেরে ২০ শ্রমিক কাজ করছে। মিছির আলীর মতো কামাল মিজি, সাহাবুদ্দিন সউদসহ, সাইফুল মেম্বার, শামীম পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, হারুন-অর-রশিদ, জাহাঙ্গীর, দেলোয়ার, কলামতর গাজীর মত কয়েকশ’ মৎস্যজীবি বদলে গেছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলায়।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল আহাদ লাজু জানান, দেশে মাছ উৎপাদনে ফরিদগঞ্জ উপজেলা চতুর্থ স্থানে রয়েছে। বর্তমানে উপজেলায় মাছ চাষ করে ৪ হাজার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। ফরিদগঞ্জে বর্তমানে বছরে মোট ৬ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার মৎস্যচাষীরা উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। উপজেলা মৎস্য অফিসের ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফরিদগঞ্জে মোট পুকুরের সংখ্যা ৪৫টি সরকারি। আয়তন ১৮ দশমিক ৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে মাছ উৎপাদন হয় ৪২ মে. টন। বেসরকারি এহ হাজার ৯৮৬ হেক্টর আয়তনের ১০ হাজার ৪৭০টি পুকুর রয়েছে। এতে মাছের আবাদ হয় ৫ হাজার ৪৭০ মে.টন। ৩৮৬ হেক্টর আয়তনের ডাকাতিয়া নদীতে ৬৬ মে.টন মাছ উৎপাদন হয়। ৫০ হেক্টর আয়তনের ১৩টি খালে মাছের উৎপাদন হয় ১১ মে. টন। ৩১ হেক্টর আয়তনের ৭৬ টি ধান ক্ষেতে মাছের আবাদ হয় ৫৫ মে. টন। ৪৭ হেক্টর আয়তনের ২৯টি বোরপিটে মাছের উৎপাদন হয় ৯১ মে.টন। এছাড়া ২৭ হেক্টর আয়তনের ১৬ টি বাণিজ্যিক মৎস্য খামারে ১০১ মে.টন মাছ উৎপাদন হয়।
উপজেলা মৎস্য অফিসার জানান, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের কারণে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ধান উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে, মাছ উৎপাদনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ফরিদগঞ্জে এমন অনেক মৎস্য চাষী রয়েছেন, যারা এক সময় দু’বেলা ভাত খেতে কষ্ট হতো। আজ তারা মাছ চাষ করে কোটিপতি হয়েছেন। তিনি বলেন, সৎ পথে উপার্জন করে সামর্থবান হওয়া যায়, এমন অনেক উদহারণ ফরিদগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে। মাছ চাষীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ভবিষ্যতে এ উপজেলাকে মাছ উৎপাদনে দেশসেরা করতে কাজ করছেন।
সুত্রঃ বাসস/কৃপ্র/এম ইসলাম