ড. মোঃ আবু বকর: মৎস্য আল্লাহ তা’য়ালার একটি বিরাট অনুগ্রহ ও বিশেষ নেয়ামত। মৎস্য সম্পদ সাধারনত দুইটি উৎস থেকে আহরণ করা হয়। লোনা পানি বিশিষ্ট সমুদ্র থেকে এবং নদী বা মিঠা পানি থেকে । এতদসংক্রান্ত বিষয়ে আল্লাহ তা’য়ালা কোরানে হাকিমে উল্লেখ করেন। “ওয়ালা ইয়াসতাবিল বাহরানি হাযা আ’যবুন ফোরাতুন সাইগুন শারাবুহূ ওয়ালা মিলহুন উজ্বাজ্ব; ওয়ামিন কুল্লিন তা’কুলূনা লাহমান ত্বরিয়্যাওঁ ওয়া তাস্তাখ্রিজুনা হিলয়াতান তালবাসূনাহা ওয়াতারাল ফুলকা ফীহি মাওয়াখিরা লিতাব তাগূ মিন্ ফাদ্বলিহী ওয়ালা’য়াল্লাকুম তাশকুরুন (সুরা ফাতির-১২) অর্থাৎ আর সমুদ্রের দুইটি পানির ধারা সমান নয়। একটি তো মিঠা পানি পিপাসা নিবারণকারী এর পানি পান করায় সুস্বাদু। আর অপর ধারা তীব্র লবনাক্ত পানি বিশিষ্ট ও বিস্বাদ। কিন্তু এই উভয় ধারা থেকেই তোমরা টাটকা তাজা গোস্ত (মাছ) লাভ করে থাক, এবং আহরণ কর মনি মুক্তার অলংকারের জিনিস যা তোমরা পরিধান কর এবং এ পানিতেই তোমরা দেখছ নৌকাগুলো উহার বুক চিরে চলাচল করছে যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং যাতে তোমরা শুকর আদায়কারী হও।
আর সমুদ্রের দুইটি পানির ধারা সমান নয়। একটি তো মিঠা পানি পিপাসা নিবারণকারী এর পানি পান করায় সুস্বাদু। আর অপর ধারা তীব্র লবনাক্ত পানি বিশিষ্ট ও বিস্বাদ। কিন্তু এই উভয় ধারা থেকেই তোমরা টাটকা তাজা গোস্ত (মাছ) লাভ করে থাক, এবং আহরণ কর মনি মুক্তার অলংকারের জিনিস যা তোমরা পরিধান কর।
আহকামুল হাকিমীন মহান রাব্বুল আলামীন ষ্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন যে লোনা পানি ও মিঠা পানি এ উভয় উৎস্যেই মানুষের জন্য মৎস্য সম্পদ রয়েছে। মানুষ এ’দু উৎস থেকেই তা আহরণ করতে পারে। কোরানে হাকিমের এ নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষ একদিকে আহরণ করছে লোনা ও মিঠা পানির মাছ। অন্য দিকে মিঠা পানির মাছকে সঙ্করায়ণ পদ্ধতি অনুসরণ করে নুতন জাত উদ্ভাবন এর মাধ্যমে দ্রুত বর্ধনশীলতা ও অন্যান্য উৎকর্ষ্য আনায়ন করা হয়।
কৃত্রিম সঙ্করায়ণ এর যেমন সুবিধা আছে তেমনি তার নেতিবাচক দিকও রয়েছে। মৎস্য গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীগনের মতে এ পদ্ধতির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে মৎস্য হ্যাচারিতে উন্নত মানের পোনা উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। এ জন্য ভালগুন সম্পন্ন ও যথাযথ বয়স প্রাপ্ত ব্র“ড মাছ পোনা উৎপাদন সঙ্করায়ন কাজে ব্যবহার করতে হবে। ব্র“ড মাছ সিলেকশনের ক্ষেত্রে আন্তঃ প্রজনন অর্থাৎ একই বা ঘনিষ্ঠ বংশ জাত স্ত্রীও পুরুষ মাছ ব্যবহার সমীচিন নহে। এর ফলে অন্তঃ প্রজনন জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর ফলে মাছে বংশ পরস্পরায় বৈচিত্রহীনতা বৃদ্ধি উৎপাদন হ্রাস প্রজনন বিফলতা, বিকলাঙ্গতা ও রোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
মৎস্য বিজ্ঞানীগণ এ সকল বিষয় বিবেচনায় রেখেই তাদের সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে অগ্রসর হচ্ছেন। আর সে কারণেই বর্তমান সময়ে মাছের বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। মহান আল্লাহর ঘোষণা, আকাশ পৃথিবীর সৃষ্টি নৈপূন্যে রাত ও দিনের আবর্তনে নিশ্চিত নির্দশন রয়েছে চিন্তাশীল ও জ্ঞানবানদের জন্য এ ঘোষণা অনুসরণ করে মানুষ মৎস্য চাষের গবেষণা করেছে। তারই ফলশ্র“তিতে আজ সম্ভব হচ্ছে মৎস্য চাষের নুতন প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
পরম করুনাময় আল্লাহ তা’য়ালা তার অনুগ্রহকে মানুষের জন্য অবারিত করেছেন। ফলে ধনী কিংবা নির্ধন, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, ছোট বড় নির্বিশেষে সবাই তার অনুগ্রহের দান সমূহ ভোগ করছে উপকৃত ও লাভবান হচ্ছে। অনুরূপভাবে মানুষের জীবন পরিচালনায় যে নির্দেশনা তার পক্ষ থেকে নবী রসুলগনের মাধ্যমে জারী করা হয়েছে মানুষ যদি তা সঠিক ভাবে মেনে চলে তবে তা মানুষের জীবনে সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তারই নির্দেশনা অনুসরণ করে জিন্দেগী যাপনের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ ও একটি সুন্দর পৃথিবী গঠনের তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখকঃ চীফ সায়েন্টিফিক অফিসার ও প্রকল্প পরিচালক (অবসর প্রাপ্ত) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট জয়দেবপুর, গাজীপুর।
কৃপ্র/এম ইসলাম