জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ওজোনস্তর রক্ষা দিবস পালন করা হয়। ভূপৃষ্ঠে আল্ট্রাভায়োলেট বি রশ্মি পড়ায় কোনো কোনো এলাকায় মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগৎ, অণুজীব, জড়বস্তু, বায়ুর ক্ষতি করছে। যেমন মানুষের চোখের ছানি, ত্বকের ক্যান্সার, রোগ প্রতিরোধ, শক্তি হ্রাস, ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন রকম অসুখ-বিসুখের উৎস উলি্লখিত রশ্মি।
শ্বেতকায় জনসমষ্টির মধ্যে মেলানোমা নামের ত্বকের ক্যান্সার হচ্ছে। এই রশ্মির প্রভাবে সামুদ্রিক জীবজগতের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মাছ দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে, রোগবালাই হচ্ছে, প্লাংটন নষ্ট হচ্ছে ও জলজ জীবের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। অক্সিজেনের তিন পরমাণু মিলে তীব্র গন্ধযুক্ত বিষাক্ত হালকা নীল বর্ণের গ্যাসই হচ্ছে ওজোনস্তর। ভূপৃষ্ঠের ২৫ কিলোমিটার ওপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এই গ্যাসের ঘনত্ব বেশি।
এই স্তরে ওজোন পৃথিবীর চারপাশে ডিমের খোসার মতো একটা পাতলা (২.৫-৩ মি.মি. পুরু) আবরণের স্তর রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবেই বায়ুমণ্ডলের ওই স্তরে ওজোন ক্রমাগত সৃষ্টি ও ধ্বংস হয়। বিভিন্ন কারণে ওজোনস্তর ক্ষয় হয়ে কিংবা ছিদ্র হয়ে সূর্য থেকে ভূপৃষ্ঠে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক বি রশ্মি পড়ছে। ওজোনস্তর এই রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশের সময় প্রতিরোধ বা শোষণ করে। ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি) যৌগগুলোর ক্রমাগত নিঃসরণই ওজোনস্তর ক্ষয় করে।
সিএফসি গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণ হচ্ছে রেফ্রিজারেটর (ফ্রিজ), এয়ারকন্ডিশন, তেলচালিত গাড়ি, যন্ত্রপাতি, এরোসল, কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণকারী যন্ত্রপাতি, ইটভাটার জ্বালানি, রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার দ্রাবক, অগি্ননির্বাপক যন্ত্র, কীটনাশক, রাসায়নিক সারসহ কার্বন সংক্রান্ত যাবতীয় দ্রব্য তৈরি ও ব্যবহার। অর্থাৎ মানুষের কারণেই সিএফসি গ্যাস তৈরি হচ্ছে এবং ওজোনস্তর ক্ষয় করছে।
ওজানস্তর ক্ষয়রোধের জন্য করণীয় হচ্ছে দুটি এক. সিএফসি গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে; দুই. প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করা। সিএফসি বা কার্বন নিঃসরণকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমানোর জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন রকম কর্মসূচি এবং বাধ্যতামূলক কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশনে। সেখানে উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার সীমিত করতে এবং বিকল্প যন্ত্রপাতি ব্যবহারের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। উন্নয়নশীল দেশেও কার্বন নিঃসরণকারী যন্ত্রপাতির বিকল্প ব্যবহার ও বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।
১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রটোকলে বাংলাদেশসহ ৪৬টি দেশ ওজোনস্তর রক্ষার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে ২০৪০ সালের মধ্যে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী বস্তুগুলোর ব্যবহার বন্ধ করার কথা। কিন্তু ওজোনস্তর ক্ষয়কারী কার্বন নিঃসরণকারী বস্তুগুলোর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। বৃক্ষরোপণ করেও বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ কমানো যায়। গাছপালা নিজের প্রয়োজনে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে দৈহিক বৃদ্ধির জন্য বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। ফলে কার্বন জাতীয় গ্যাস ওজোনস্তরে যাওয়ার আগেই গাছ শোষণ করে বলে ওজোন ক্ষয় হয় না।ওজোনস্তর ক্ষয়ের ক্ষতি ধীরগতিতে হচ্ছে বলে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। ওজোনস্তর ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ছে, ক্ষতিও বাড়ছে, যা আগামী প্রজন্মের জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ। এজন্য এখনই শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম