কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলায় থাই জাতের পেয়ারা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শফিকুল ইসলাম রবু। তিনি উপজেলার শিয়ালা গ্রামের মৃত সায়েদার রহমানের ছেলে।
শফিকুলের পেয়ারা বাগানে গেলে চোখ ফিরাতে মন চাইবে না। ছোট-বড় গোলাকৃতির পেয়ারা প্রায় প্রতিটি গাছে নিচ থেকে কাণ্ড পর্যন্ত ধরে আছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই আকৃতিতে বড় হওয়ায় মূল্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পেয়ারা চাষের শুরুতে কৃষক শফিকুল ভালো করতে না পারলেও হাল ছেড়ে দেননি। এর প্রসার বৃদ্ধি লক্ষ্যে বেশি লাভের আশায় বাণিজ্যিকভাবে পিয়ারা চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
১৯৮৯ সালে ডিগ্রি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হতে না পেরে কিছুটা হতাশায় পরিবারের লোকজনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রথমে তিনি পেঁপে, করলা, ঢেঁড়শের আবাদ শুরু করেন। আবহাওয়া অনূকূলে না থাকায় স্থানীয় কৃষি বিভাগের প্রত্যক্ষ পরামর্শ ও সহযোগীতার অভাবে বাণিজ্যিকভাবে সে ব্যর্থ হন। পরে ২০১৩ সালে তার বড় ভাই প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের পরামর্শে তাদের পৈত্রিক দুই বিঘা জমিতে প্রায় দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করে পেয়ারাসহ অন্যান্য শাক-সবজি চাষের সিদ্ধান্ত নেন। সবজি চাষে কোন রকমে পুঁজি ফেরত পেলেও পেয়ারা চাষে ভালো ফলন হওয়ায় এক বছরে আশানুরূপ লাভ করে পেয়ারা চাষে শফিকুল এখন স্ববলম্বী।
তিনি জানান, আমার বড় ভাই সাইফুলল ইসলামের পরামর্শে পৈত্রিক দুই বিঘা জমিতে প্রায় দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করে ২০১৫ সালে অর্ধেক জমিতে পিয়ারা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করি। সেই লক্ষ্যে প্রথমে বগুড়া জেলার মাহাস্থান থেকে উন্নত মানের থাই জাতের ১৪৮টি ৩০ টাকা দরে পেয়ারার চারা কিনে লাগাই। গাছের বয়স দুই মাসের মাথায় ফুল আসলে বাগানে নিজেসহ মাঝেমধ্যে দিন হাজিরায় ৩/৪ জন শ্রমিক নিয়ে নিবিড় পরিচর্যা শুরু করেন। বৃষ্টি বাদল এবং নানা রোগবালায়ের কারণে স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারিগরি পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করার ফলে বাগানের অবস্থা উন্নতি হয়েছে। ডালে ডালে পিয়ারা শোভা পাচ্ছে।
শফিকুল আরো জানান, বর্তমানে প্রতিমণ পেয়ারা প্রায় দুই হাজার টাকা মণে জমি থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এ বছর প্রথম বিক্রিতেই ভালো মুনাফার আশা করছেন। সারা বছর এই বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে পেয়ারা বিক্রয় হবে। তখন মুনাফা বেশি আর খরচ কমিয়ে আসবে। কোন ফরমালিন কিংবা মেডিসিন প্রয়োগ ছাড়াই তার বাগানে উৎপাদিত থাই জাতের পিয়ারা গাছ থেকে নামানোর পর প্রায় ৫/৬ দিন থাকলেও ভিতরে ও বাহিরে কোন পঁচন ধরে না। খেতে খুব সুস্বাদু মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদা বিদেশেও রয়েছে। দেশি পেয়ারার চেয়ে বেশি গুণাগুণ থাকায় স্থানীয় জাতের চেয়ে এর দাম প্রায় তিনগুণ। পেয়ারা ছাড়াও লেবু, বেদেনা, ঢেঁড়শসহ বেশকিছু শাকসবজি চাষ করেন তিনি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, শফিকুলের পেয়ারা বাগান খুব ভালো হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়ার কারণে যথাসময়ে ভালো পরিচর্যা করার ফলে রোগ-বালাই কম হওয়ায় থাই জাতের পেয়ারা চাষে ভালো ফলন হবে।